জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে অতিরিক্ত আলু উৎপাদনের কারনে বাজারে দাম কম হওয়ার কারণে এই শঙ্কায় রয়েছে।
অন্যান্য বছরগুলোতে আলুতে লাভের মুখ দেখলেও এবার আলুতে কপাল পুড়ছে তাদের। অপরদিকে কৃষকদের লোকসানের কমাতে সরকার হিমাগার গেটে আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে আলু ক্রয়ের লোক না থাকায় আলুতে বড় ধরনের লোকশান পোহাতে হবে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ করেছেন আলু চাষীরা।
কৃষক ও বীজ আলুর ডিলাররা জানান, মৌসুমের শুরুতেই বীজ আলুর বাজার ছিল সিন্ডিকেটের দখলে। একারনে সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ আলু সংগ্রহ করতে হয়েছে কৃষকদের। এর সঙ্গে সার, শ্রমিক ও কীটনাশকসহ সব মিলিয়ে প্রতিবিঘা আলু চাষে কৃষকের ব্যয় হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। তবে মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে বাজারে ধস নেমেছে। এতে বড় ধরনের লোকশান পোহাতে হবে বলে ধারনা করছেন কৃষকেরা।
উপজেলার রায়গ্রাম এলাকার কৃষক জাকারিয়া জানান, এ বছর চড়া দামে আলুর বীজ কিনে প্রায় ৫৮ বিঘা জমিতে আলুর প্রজেক্ট করেছিলেন। মৌসুমের শুরুতে তিন ভাগের একভাগ আলু বিক্রি করে দেন। বাকী আলু বিক্রি ও বীজের জন্য স্থানীয় একটি হিমাগারে রেখে দেন। বর্তমানে যে আলুর দাম তাতে করে প্রতি বস্তা আলুতে হিমাগারের ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে তিনি হাতে পাচ্ছেন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। মৌসুমী আলু ব্যবসায়ী বাবু জানান, তিনি এবছর কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে প্রায় ৩শ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছেন। তার প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে রাখা পর্যন্ত খরচ হয়েছিল ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে হিমাগারে প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতি বস্তা আলুতে আমার লোকশান হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেই হিসেবে আমার ৩শ বস্তা আলুতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা লোকশান হয়েছে। বর্তমানে আমি পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়েছি।
উপজেলার চাঁনপাড়া সাথী হিমাগারের ব্যবস্থাপক মো. সামছুল হক বলেন, হিমাগারে সংরক্ষিত আলু প্রতিদিন ৫-৬ হাজার বস্তা বের হওয়ার কথা থাকলেও বের হচ্ছে মাত্র ২ থেকে আড়াই হাজার বস্তা।
একারণে মালিক পক্ষকে ঋণ নিয়ে হিমাগারের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। চলতি বছরের নভেম্বর ১৫ তারিখ পর্যন্ত হিমাগারে আলু সংরক্ষণে রাখা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আলু বের সম্পূর্ণ আলু বের না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর তাতে মালিক পক্ষও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।