বান্দরবানের রুমা উপজেলার কমলা বাজার থেকে চেমা পাড়া হয়ে চিংলক পাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ইট সোলিন সড়কটি এখন রীতিমতো জনদুর্ভোগের আরেক নাম। চার-পাঁচ বছর আগে নির্মাণকাজ শুরু হলেও আজও সড়কটি টেকসই সংস্কারের মুখ দেখেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ইট উঠে গেছে, জায়গায় জায়গায় তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত - ফলে এটি এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
প্রতিদিন শত শত মানুষ এই পথ দিয়েই বাজার, বিদ্যালয় ও হাসপাতালে যাতায়াত করেন। কিন্তু রাস্তায় খানাখন্দ, ভাঙন ও কাদামাটিতে পরিণত হওয়ায় এটি এখন দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্ষা এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তখন এই রাস্তা দিয়ে কোনো মালবাহী ট্রাক, ভ্যান বা মোটরবাইক পর্যন্ত চলাচল করা সম্ভব হয় না। রাস্তায় থাকা ছোট ছোট ব্রিজগুলোও এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক ব্রিজের রেলিং ভেঙে গেছে, ওয়াল ধসে পড়েছে, শুকনো মৌসুমেও পানি জমে থাকে। ফলে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে পথ পার হতে হয় স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় চাষাবাদ নির্ভর এই অঞ্চলে কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আদা, হলুদ, মরিচ, মারফা, ড্রাগন ফল, কুমড়া, লাউসহ নানান ফসলের উৎপাদন হয় এ অঞ্চলে। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে এসব পণ্য সময়মতো বাজারে নিতে না পারায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ছেন কৃষকরা এবং গ্রামবাসীরা জানান চার থেকে পাঁচটা বার রাস্তা মাপা হয়েছে, অল্প অল্প করে কিছু জায়গায় কাজ করা হয়েছে। রাস্তার চারপাশে জঙ্গল এবং ঝোপ- ঝাড়, হাফ কিলো বা এক কিলোর মত রাস্তা রয়েছে ইট সোলিন কাজ।
চিংলক পাড়ার কৃষক মোশি ত্রিপুরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,বৃষ্টির সময় এই রাস্তা কাদা-পানিতে ডুবে যায়। তখন পণ্য নিয়ে বাজারে যাওয়া অসম্ভব। আমাদের জীবিকা পুরোপুরি এই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু কেউ খোঁজ নেয় না।
পাইনং মেনরন লেৎপুং পাড়ার কারবারী দোলার ম্রো জানান, স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা প্রতিদিন কাদা মাড়িয়ে স্কুলে যায়। অনেক সময় জুতা হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়। শিক্ষকরা পর্যন্ত নিয়মিত আসতে পারেন না। এতে শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রুমা উপজেলার বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, এই রাস্তায় চলাচল করা এখন জীবন ঝুঁকির সমান। রাস্তা ও ব্রিজের এমন দুরবস্থায় শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা সময়মতো বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারছেন না, ফলে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে বান্দরবান জেলা উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াসিন আরাফাত জানান, কমলা বাজার-চেমা পাড়া-চিংলক পাড়া সড়কটির অবস্থা সম্পর্কে জানা আছে। ১-২ বছর আগে আমরা ১কিলোমিটার ইট সোলিন রাস্তা করেছিলাম। আর বাকি অংশগুলো এল জি ই ডি অন্তর্ভুক্ত রাস্তা বলে জানিয়েছেন।
রুমা উপজেলার প্রকৌশলী এলজিইডি (অতিরিক্ত) দায়িত্বে থাকা দেবাকর রায় জানান, রুমায় চেমা পাড়া-চিংলক পাড়া সড়কটি নিয়ে এই চার -পাঁচ বছরের মধ্যে কোন বাজেট এবং কোন বরাদ্দ আসেনি। কোন রকমের কাজ করা হয়নি -তাই এ সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না বলে জানিয়েছেন।
কত বছর অপেক্ষা করলে আমরা একটি পাকা, নিরাপদ রাস্তা পাব? তাদের দাবি, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দেশ এগিয়ে গেলেও রুমার এই জনপদ এখনও অবহেলার শিকার। এলাকাবাসী অবিলম্বে সড়কটির টেকসই সংস্কার ও ব্রিজগুলোর মেরামতের দাবি জানিয়েছেন। যাতে বহু বছরের এই ভোগান্তির অবসান ঘটে এবং পাহাড়ি জনজীবনে ফেরে স্বস্তি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh