নিরোদ দাস গত হয়েছেন কয়েক বছর পূর্বে। তার ৫ সন্তান বসবাস করেন উপজেলার হাতিরবেড় গ্রামে। হাতিরবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব-দক্ষিণ কোনে তাদের বসবাস। নিরোদের ৫ ছেলেরা হলেন, সঞ্জয় দাস, কিশোর দাস, নয়ন দাস, অসীম দাস ও কৃষ্ণ দাস। এদের মধ্যে সঞ্জয় দাসের ছেলে সজল দাসও স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন একই স্থানে। ওই ৬ টি পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট ২৩ জন। এদের মধ্যে ১১ জন শিশু ও কিশোর রয়েছে।
গত ৬ বছর পূর্বে হাতিরবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারিদিক দিয়ে উচু প্রাচীর তুলে বিদ্যালয়টি সংরক্ষণ করা হয়। এতে বাঁধে বিপত্তি ! ওই পরিবারের একমাত্র যাওয়া আসার পথ ছিল বিদ্যালয়ের ভেতর থেকে। ছয় বছর পূর্বে দেয়াল তুলে দেয়ায় বিপাকে পড়ে পরিবারগুলো। দেয়ালের নিচ দিয়ে ছোট্ট ফাক গলে বের হতে হয় তাদের।
একাধিকবার দেয়ালের ফাক গলে যাতায়াত করার সময় দেয়ালে মাথায় আঘাত লাগে। শিশু ও নারীদের কারো কারো মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়েছে। তবুও জীবন জীবিকার সন্ধানের তাদের বের হতে হয় ফাঁক গলে। বর্ষাকালে ফাঁকের ডোবায় পানি জমে থাকে। কাঁদাপনির ভেতর দিয়ে মাথা-শরীর ডুবিয়ে চলাচল করতে হয় নারী ও শিশুসহ বড়দের। এমন দূর্বিসহ জীবন পার করতে হচ্ছে তাদের। তাদের বাড়ীর পূর্ব পাশে ডোবা। পশ্চিম পাশে অন্য পরিবারের বসবাস। মানবিক কারণেও কেউ তাদের যাতায়াতের পথ দেন না। এমতাবস্থায় তারা ছয় বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ বিষয়টি নিয়ে গত আইনশৃঙ্খলা সভায় এনসিপির উপজেলা সমন্বয়ক মো. মাজেদুর রহমান জুয়েল পরিবার গুলোর মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি উত্থাপন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্বাস দেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান কারার। তারপরে মাস পার হয়েছে। অসহায় ওই পরিবারগুলো ভালোভাবে যাতে যাতায়াত করতে পারেন, তার জন্য প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।
কথা হয় হাতিরবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পান্না আক্তারের সাথে। তিনি জানান, দেওয়াল নির্মানের সময় তাদের বলা হয়েছিল এক হাত জায়গা ছাড়লে পথের ব্যাবস্থা করে দেয়া যাবে। তারা তখন জায়গা না দেয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জায়গা ছাড়ার বিষয়টি অবশ্য সঞ্জয় ও কিশোর দাস অস্বীকার করেন।
এ বিষয় রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ তামান্না ফেরদৌসির কাছে জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যাতায়াতের জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচু দেয়াল তুলে দিয়েছেন। যেহেতু জায়গাটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা চাইলে দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব।
কথা হয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরহাদ আলীর সাথে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি অমানবিক। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবো।