পাহাড়ে সকালবেলার সৌন্দর্য দেখার সুযোগ সবার ভাগ্যে জোটে না। সেটি উপভোগ করতে হলে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়, হাঁটতে হয় শিশিরে ভেজা ঘাসের কচি ডগার ওপর দিয়ে। সেই শিশির মাড়িয়ে হাঁটার অনুভূতি এক অনন্য আনন্দ যা শুধু প্রকৃতিপ্রেমীরাই অনুভব করতে পারেন। বলছিলাম হেমন্ত ঋতুর শুরুতে প্রকৃতির নতুন রূপের কথা। দেশে এখন পুরোদস্তুর হেমন্তকাল চলছে। কুয়াশায় ঢাকা পথঘাট, শিশিরে ভেজা ধানক্ষেত আর ঝাপসা দৃশ্যটা যেন শীতেরই সকাল। অথচ এটি শরতের শেষ প্রহরের সকাল। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ভোরের এই কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শীত আসন্ন। দীর্ঘ গরমের পর সকালের এই ঠান্ডা পরশে স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয়দের মুখে।
শরতের শেষে প্রকৃতির রূপে এসেছে বদল। মাঠ-ঘাট, গাছপালা, ফসলের পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুতে ঝিলমিল করছে সকালের আলো। কৃষকরা বলছেন, এই সময় কুয়াশা পড়া মানেই ফসলের পরিপক্বতা ও নতুন মৌসুমের আগমন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে এলাকা। সূর্যের দেখা মিলতে সময় লাগছে। সকালবেলার ঠান্ডা বাতাসে বাইরে বের হওয়াও কষ্টকর, তবে সেই অনুভূতিতে আছে এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
মাটিরাঙ্গায় আবহাওয়া অফিস না থাকলেও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কমে আসায় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে নিচে নামছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শীতের আমেজ আরও স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অন্যদিকে, শরতের শেষভাগে প্রকৃতির এই রূপ একদিকে মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য এনে দিলেও, অন্যদিকে তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে আসন্ন শীতের আগমন।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, “সবে মাত্র অক্টোবর মাস শুরু, শীত আসতে এখনও দেরি আছে। তবে ভোরে ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যায় বাড়ির চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা। কুয়াশার সঙ্গে সঙ্গে হালকা শীতও অনুভূত হয়। রাতে হালকা কাঁথা নিয়ে ঘুমাতে হয়, আবার মাঝেমধ্যে ফ্যানও চালাতে হয়। দিনের বেলায় অবশ্য গরম অনুভব করা যায়।”
কৃষক আবদুল হান্নান বলেন, “ভোরে ভোরে ঠান্ডা বাতাসে কুয়াশা দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়। মনে হচ্ছে, এবার সত্যিই শীত আসছে। সকালে মাঠে কাজ করতে নামলে চারপাশে সাদা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে থাকে সবকিছু। দূরের গাছপালা ঝাপসা দেখা যায়, পায়ের নিচে ঘাসে শিশির জমে থাকে। এমন দৃশ্য দেখে মনে প্রশান্তি আসে-মনে হয় প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সাজছে শীতকে বরণ করে নিতে।”
অটোরিকশাচালক মহিন উদ্দিন বলেন, “গতকাল সকালে কুয়াশায় রাস্তায় ভালো করে দেখা যাচ্ছিল না। তবে ঠান্ডা হাওয়া লাগায় মনটা ভালো হয়ে গেছে। সকাল সকাল অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলাম, কিন্তু রাস্তায় লোকজন কম ছিল। কুয়াশায় সামনেটাও ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। তারপরও ভালো লাগছিল-অনেক দিন পর ঠান্ডা হাওয়া পেলাম।”
মাটিরাঙ্গা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জয়নাল বলেন, “শরৎকালে এবার ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস। এ কারণে দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। আর এখন রাত ও সকালে কুয়াশা পড়ছে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে।”
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, “কুয়াশা দেখা মানেই শীত পুরোপুরি নেমে এসেছে এমন নয়। তবে এটি শীত আসার একটি প্রাকৃতিক ইঙ্গিত। এখন থেকেই কৃষকদের জমি প্রস্তুত করা, বীজ বপন ও সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ফসলের রোগবালাইয়ের ঝুঁকিও বেড়ে যায়, তাই সঠিক পরামর্শ নিয়ে কাজ করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী মৌসুমে কৃষকরা যাতে পর্যাপ্ত উৎপাদন পান, সে লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাঠপর্যায়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।”
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
