পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক, উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, নার্স, আয়া, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নকর্মী সহ হাসপাতালের প্রায় সকল স্টাফদের সীমাহীন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দূর্নীতি ও দালাল এবং এম্বুলেন্স ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে দিশেহারা রোগি ও তাদের স্বজনরা। অনিয়ম ও অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও)। এর প্রতিবাদে হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের নিরাপত্তাসহ হাসপাতালের চলমান অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়।
কর্মসুচি থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট, দালাল চক্র প্রতিহতসহ হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিকরণ, হাসপাতালে কর্মরত সকলের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যায় উন্নতিকরণের দাবী জানানো হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতাল সংলগ্ন বিভিন্ন ক্লিনিকের দালাল ও এম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার শাহেদুল ইসলাম শিশিরকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পার্শ্ববর্তি লালপুর, আটঘরিয়া একাংশসহ ঈশ্বরদীর প্রায় সাড়ে ৫ লাখ লোকের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে চলে আসছে তীব্র চিকিৎসক সংকট। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অফিসিয়াল কর্মী সংকট। হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন রয়েছে। তবে তাতে যক্ষারোগির বুকের এক্সরে ছাড়া অন্য কোন ধরণের এক্সরে করা হয় না। সরকারিভাবে তেমন একটা এক্সরে ফ্লিমও হাসপাতালে সরবরাহ করা হয় না। আছে আল্টাসনো মেশিন। কিন্তু আল্টাসনো করার মত ডাক্তার না থাকায় সেটাও অকেজো প্রায়। কোন রকম সচল রয়েছে ইসিজি মেশিন। তবে হাসপাতালে এসে মৃত্যু হওয়া রোগির মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহার হয় ইসিজি মেশিন। রয়েছে প্যাথলজি।
দক্ষ প্যাথলজিষ্ট থাকলেও সব ধরণের টেস্ট করার নেই প্রয়োজনীয় উপকরণ। রয়েছে একটি সরকারি এম্বুলেন্স। কিন্তু সেটি রোগিদের জন্য ব্যবহার হওয়ার নজির খুব একটা নেই। হাসপাতালে কর্তব্যরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ( স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশে আনা নেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকে এম্বুলেন্সটি। তবে মাসিক জ্বালানি খরচের হিসেবে ঠিকই নজরকাড়ার মত। আর হাসপাতালটিতে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), দুইজন মেডিকেল অফিসার ও পাঁচজন সহকারী সার্জন, একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন মেডিকেল অফিসার (আয়ুর্বেদিক) ও সাঁড়া, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি, সলিমপুর, পাকশী, লক্ষ্মীকুন্ডা ও সাহাপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য সহকারী সার্জন পদ রয়েছে ৭ টি। হাসপাতালটিতে প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসেবে মোট ২৮ টি মঞ্জুরীকৃত পদ রয়েছে।
কিন্তু বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অর্ধেকেও কম চিকিৎসক হাসপাতালটিতে কর্মরত রয়েছে। আবার তাদের মধ্যে থেকেও অন্যত্র বদলী, প্রেষণে থাকার ঘটনাও রয়েছে। কর্মরত এসব চিকিৎকের মধ্যেও আবার কতিপয় চিকিৎসক হাসপাতাল সংলগ্ন নিজেই ক্লিনিং এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টার দিয়ে ব্যবসা করছেন। হাসপাতালের নিয়মিত ডিউটির চেয়ে তাদের ক্লিনিকগুলোতেই বেশি সময় ধরে রোগি দেখেন। হাসপাতালে আসলেও নানাভাবে প্যাথলজি পরীক্ষা নিরিক্ষাগুলো নিজের কিংবা পছন্দমত ক্লিনিকে করান। যেখানে পরীক্ষাগুলো করার মত দক্ষ কোন জনবল নেই। অথচ সেইসব পরীক্ষা করার মত প্যাথলজি হাসপাতালেই রয়েছে। আবার দক্ষ প্যাথলজিষ্টও রয়েছে। তারপরও শুধুমাত্র কমিশন বাণিজ্যের জন্য এসব ক্লিনিকের অদক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা ভূলভাল রিপোর্ট করিয়ে রোগিদের সঙ্গে অভিনব এক প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব অনিয়ম ও দূর্নীতি চলে আসছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লিনিকগুলোর নিযুক্ত দালাল ও এম্বুলেন্স চালকদের আনাগোনায় সব সময় পরিপূর্ণ থাকে হাসপাতাল। আবার হাসপাতালের জায়গায় তাদের এম্বুলেন্সগুলো যত্রতত্রভাবে রাখার কারণে হাসপাতালে আসা রোগিদের সীমাহীন দূর্ভোগে পড়তে হয়। সম্প্রতি হাসপাতালটিতে আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে শাহেদুল ইসলাম শিশির যোগদানের পর হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা, অনিয়মসহ দূর্নীতি রোধ, দালাল ও এম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করেন।
দালাল ও এম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সদস্য এম্বুলেন্স চালক জুয়েলকে হাতেনাতে আটক করে সাত দিনের জেল প্রদান করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. আসাদুজ্জামান সরকার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিন্ডিকেটের লোকজন হাসপাতাল চত্তরে আরএমও শাহেদুল ইসলাম শিশিরকে লাঞ্ছিত করে। এই ঘটনায় হাসপাতালে কর্মরত সকলেই নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেছেন বলে সুত্রগুলো দাবী করেছে।
এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাক্তার শাহেদুল ইসলাম শিশির জানান, হাসপাতালটি নানা অনিয়ম, দালাল ও সিন্ডিকেটের নিকট নিজেই অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ায় তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. আলী এহসান জানান, জনবলসহ নানা সংকটের মধ্যে দিয়েই চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে দালাল ও এম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এখন তারা সকলেই নিরাপত্তাহীনতাবোধ করছেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, ঈশ্বরদী নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলন উপজেলা শাখার মুখপাত্র ইসমাদ দোহা, সমন্বয়ক সুলতান মাহমুদ খান, সমন্বয়ক আহসান হাবিব, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি খালেব বিন পার্থিব সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঈশ্বরদী নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাজ্জাদ হোসাইন সুজাদ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
