সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মৃত শিক্ষার্থীর নাম সায়মা হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এবং মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়।
গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে ডুবে যান তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে রামেক হাসপাতালে ফরোয়ার্ড হয়। পরে রামেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রামেকের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মৃত অবস্থাতে তাকে নিয়ে আসা হয়। তার পালস দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ জানার জন্য মরদেহটি ময়নাতদন্ত বা আইনি প্রক্রিয়ার জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।’’
এদিকে, রাবির সুইমিংপুলে সাঁতার অনুশীলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খানকে আহ্বায়ক করে তিনজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন রাবি কর্তৃপক্ষ।
কমিটিকে রাবি সুইমিংপুলে ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি ও পরবর্তীতে রাবি চিকিৎসা কেন্দ্রে সায়মা হোসাইনের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুইমিংপুল বন্ধ থাকবে বলেও নির্দেশনা দেন কর্তৃপক্ষ।
মৃত্যুর বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাবির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। উপাচার্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সামনে না আসলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙ্গে ফেলার আল্টিমেটাম দেন। অবশেষে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হলে ভূয়া ভূয়া শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ভিসির বাসভবন চত্বর।
রাবির উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব সকলে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করলেও শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ তোলেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, রাবির এই সুইমিংপুলের পানি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বচ্ছ না। সেখানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। আসন্ন প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে কয়েকমাস আগে সরঞ্জাম কেনার তাগিদ ও আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীরা দিলেও আজ অবদি সেগুলো কেনা হয়নি। যারা ঐ সুইমিংপুলে দায়িত্বরত ছিল তাদের নিজেদেরই ফিটনেস নাই বলেও অভিযোগ তোলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সুইমিংপুলটির পাশে যেসকল ট্রেইনার ও অন্যান্য কর্মচারিরা ছিলেন তারা কেনো সায়মা বাঁচতে এগিয়ে গেলোনা। পানির অস্বচ্ছতার কারনে ডুবন্ত সাইমাকে কেউ দেখতে পারনি, পানি স্বচ্ছ থাকলে ডুবন্ত সাইমাকে দেখা সম্ভব হতো বলে অভিযোগ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের। একাধিক শিক্ষার্থী উপাচার্যের কাছে জানতে চান, বিগত তিনমাস ধরে রাবির নিজস্ব সুইমিংপুলে কেনো টাকার বিনিময়ে সাতার শেখানো হচ্ছে। ট্রেইনার ও দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেবে, সায়মার পরিবারের জন্য কর্তৃপক্ষ কি করবেন। এক শিক্ষার্থী হাতে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে উচ্চ কন্ঠে বলেন, সায়মা ছিল শ্বাসকষ্টের রোগী; এইধরনের ঝুঁকিপূর্ণ একজন রোগীকে সেখানের দায়িত্বরতরা কেনো সুইমিংপুলে নামতে দিলো? এমন অসংখ্য প্রশ্নে উপাচার্যকে নাস্তানাবুদ ও নাজেহাল করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
