× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিপর্যয়ের মুখে সাদা সোনা খ্যাত লবণ শিল্প

এ.এম হোবাইব সজীব, কক্সবাজার

২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় সরকারে উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে জমি অধিগ্রহণ করায় একদিকে চাষের জমির পরিমাণ কমেছে, অন্যদিকে কমেছে চাষিও। যার কারণে লবণ উৎপাদন আগের তুলনায় কমেছে। কিন্তু লবণের মূল্য নিয়ে চরম হতাশ চাষিরা। লবণ মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বিছানো হয় পলিথিন। সেই পলিথিনে সূর্যের তাপে নোনা পানি জমাট বেঁধে পরিণত হয় সাদাসোনা খ্যাত লবণ। তাদের দাবি, এখন মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। এতে প্রতি মণের বিপরীতে চাষিদের লোকসান হচ্ছে। প্রতি মন লবণ সব মিলিয়ে চাষিদের উৎপাদন খরচ পড়ে বর্তমানে ২৫০ টাকা। প্রতি মণ লবণ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা বিক্রি করতে না পারলে চাষীরা এ শিল্প থেকে লোকসানের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিবেন।

অথচ বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চাষীরা টিকে থাকতে পারছেন না।” এ অবস্থায় ফের আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের।

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহীম চৌধুরী বলেন, ‘বিসিক তথ্য দেওয়ার সময় বারবার চাষিদের স্বার্থ দেখে না। দেখে কিছু ফড়িয়া এবং শিল্প মালিক যারা বহুজাতিক কোম্পানির সাথে জড়িত। বিসিক বারবারই তাদের স্বার্থ রক্ষা করে। আমরা অতীতেও দেখেছি বিসিক কখনও এই লবণ চাষিদের সেবাই এগিয়ে আসেনি। 

তিনি বলেন,“ গেল মৌসুম লবণ ভালো উৎপাদিত হলেও দাম না থাকায় চাষীরা লোকসানে পড়েছেন। দেশের লবণ শিল্প ও লাখো পরিবারের জীবিকা রক্ষায় বিদেশি লবণ আমদানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

চাষীরা জানান, বিসিকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বার্ষিক লবণ চাহিদা ২৬.১০ লক্ষ মেট্রিক টন, অথচ চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৩১ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ। এতে দেশের চাহিদার তুলনায় ৪.৯০ লক্ষ মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত রয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, বাস্তবে লবণের ঘাটতি না থাকা সত্ত্বেও একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পাঁয়তারা করছে, যা দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 

তথ্য অনুযায়ী এ লবণ চাষে জড়িত মহেশখালীসহ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের আংশিক বাঁশখালী অঞ্চলের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ। মহেশখালীর লবণচাষি হাসানুল আবেদীন শুভ বলেন, ‘আমরা বারবার মুক্তবাজার অর্থনীতির একটা রেফারেন্স পায়। যে কারণে কোনোভাবে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করছে না। ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের জন্য যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেটা হচ্ছে বিসিক। কিন্তু বারবার বিসিকের যে ভূমিকা সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ চাষিদের কল্যাণে আসলে বিসিক কি করছে সেটা আমরা এখনো বুঝতে পারছি না।’

কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের দায়িত্বশীল সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘লবণ চাষিদের দাবিগুলো কেন জানি পূরণ হচ্ছে না। দিন দিন লবণের বাজার নিম্নমুখী। এটার জন্য দায়ী মাফিয়া সিন্ডিকেট লবণ মিল মালিকরা। ৪ টাকায় কিনে ৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এই সিন্ডিকেটকে ভাঙা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য সরকারই পারে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে। কারণ এরকম কোনো ব্যবসা নেই পৃথিবীতে ৪ টাকায় কিনে ৫০ টাকা বিক্রি করা। এতো মুনাফা কোথাও নেই। আমরা আশা করব, আমরা আন্দোলনে আছি আন্দোলনে থাকব। 

টেকনাফের চাষীর কাশেমসহ আরও অনেকে জানান, বর্তমানে বিদেশি প্যাকেটজাত লবণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, অথচ দেশীয় লবণ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪ টাকায়। প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে খরচ হয় অন্তত ১০ টাকা। এ অবস্থায় প্রান্তিক চাষীরা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে পড়েছেন, অনেকেই বিকল্প জীবিকার সন্ধানে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন।

কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘এটা মুক্তবাজার অর্থনীতি, এখানে দাম বেধে দেওয়ার আসলে সুযোগ নেই। বর্তমান বাজারে দাম কম থাকায় প্রান্তিক চাষীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’ 


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.