স্বপ্ন ছিল নিজের জমিতে ছোট্ট একটা ঘর তুলবেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে শান্তিতে থাকবেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে জীবনের সব সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলেন স্থানীয় এক জমি বিক্রেতার হাতে। কিন্তু এখন সেই নারী অসহায় প্রতারিত হয়ে পথে বসার অবস্থা হয়েছে। ঘটনাটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের পরাসদ্দী গ্রামে ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আঞ্জুমান ইসলাম বাদী হয়ে চার জনকে আসামী করে আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ীতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন, আংগারিয়া ইউনিয়নের পরাসদ্দী গ্রামের রোকেয়া বেগম, মিন্টু ফরাজি, লিটন ফরাজি ও বেলায়েত সরদার।
শুধু ওই আঞ্জুমান ইসলাম নন, আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগমের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। রিনা বেগম, লাকি আক্তার, ইয়ারুন বেগম ও আলামিন মুন্সিসহ প্রায় ১৫ জনের সাথে জমি বিক্রির নামে রোকেয়া ও তার স্বামী মিন্টু ফরাজি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আংগারিয়া ইউনিয়নের মিন্টু ফরাজির স্ত্রী রোকেয়া বেগম ২০২২ সাথে একই এলাকার সেনা সদস্য এমদাদুল হকের স্ত্রী আঞ্জুমান ইসলামের কাছে জমি বিক্রির কথা বলে বায়না বাবদ প্রায় চল্লিশ লাখ টাকা নেন। এরপর অভিযুক্ত রোকেয়া ও স্বামী মিন্টু ফরাজি সেই টাকা দিয়ে দুটি ট্রাক কিনেন। কথা ছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দিবেন রোকেয়া। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি না করে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেন রোকেয়া ও মিন্টু।পরে জমি রেজিস্ট্রি অথবা টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় টালবাহানা। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে ও আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ীতে একাধিকবার মীমাংসা করার চেষ্টা করা হয়। রোকেয়া বেগম সালিসির সময় টাকা ফেরত অথবা জমি লিখে দেওয়ার কথা বললেও তিন বছরেও টাকা কিংবা জমি বুঝিয়ে দিতে পারেননি। এখন বায়না চুক্তি অনুযায়ী জমি হস্তান্তর না করায় আঞ্জুমান টাকা ফেরত চাইলে উল্টো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও রিনা বেগমের কাছ থেকে ১২ লাখ, লাকি আক্তারের থেকে ৫০ হাজার ও ইয়ারুন বেগমের থেকে কয়েক ভরি স্বর্ণ সহ প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বর্তমানে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী আঞ্জুমান ইসলাম বলেন,‘‘জীবনের সব সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলাম জমির বায়নায়। ভাবছিলাম নিজের একটা ঘর হবে। এখন মনে হয়, ভুল করে জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। আমি প্রায় চার বছর ধরে আমার প্রতিবেশী রোকেয়া বেগমকে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকা জমির বায়না দিয়েছি। রোকেয়া বলেছিল দ্রুত দলিল ও জমি বুঝিয়ে দিবে। এখন টাকাও দিচ্ছে না জমিও দিচ্ছে না। টাকা ফেরত চাইলে উল্টো হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের হয়রানি করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের হয়রানি করছে। আমি প্রশাসনের কাছে ও আপনাদের কাছে ন্যায় বিচারক চাই।”
ভুক্তভোগী রিনা বেগম বলেন, “ আমার স্বামী একজন প্রবাসী। আমাকে জমি দিবে এটা বলে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছে । যখন টাকা দিলাম, তখন ওরা খুব মিষ্টি কথা বলেছিল। বলেছিল দ্রুত রেজিস্ট্রি হবে। কিন্তু এখন টাকা ফেরত চাইলে উল্টো ভয় দেখায় বলে বেশি ঘাঁটলে দেখে নেবে। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।”
ভুক্তভোগী ইয়ারুম বেগম বলেন,‘‘ রোকেয়া বেগম আমার পরিচিত। কিছুদিন আগে হঠাৎ আমার বাসায় গিয়ে বলে আমি এক আত্মীর বাড়ীতে বিয়ের দাওয়াতে যাবো আপনার গহনাগুলো আমাকে একটু দেন আমি এসে দিয়ে দিবো। এখন এতোদিন হয়ে গেলো এখনও আমার গহনা ফেরত দিচ্ছে না। আমি কয়েকবার নিতে এসেছি কিন্তু রোকেয়া বিভিন্ন টালবাহানা করে। আমি এখন পারিবারিক ঝামেলায় আছি। আমি আমার গহনা ফেরত চাই।”
লাকি আক্তার নামে আরও এক ভুক্তভোগী বলেন,‘‘রোকেয়া আমার চাচাতো বোন হয়। আমার বাসায় গিয়ে রোকেয়া বলে একটু বিপদে আছি আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার দে আমি সরল মনে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার দিয়েছি । টাকা নেওয়ার সময় বলেছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ফেরত দিয়ে দিবো। এখন দুই বছর হয়ে গেছে এখনো টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এখন টাকা চাইতে আসলে আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাকে এখন রীতিমতো হয়রানি করছে। আমি চাই আমার টাকা ফেরত দেওয়া হোক।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রোকেয়া বেগমের বাড়ীতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি। তার ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এ ব্যাপারে আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ীর ইনচার্জ বিকাশ চদ্র চৌধুরী বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
