× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সৈকতের সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশৃঙ্খলায়

এ.এম হোবাইব সজীব, কক্সবাজার

০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৩ পিএম

সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকে ভরে থাকে। কিন্তু সৈকতের সৌন্দর্যের সঙ্গে এখন পাল্লা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা-বালিয়াড়ি, ফুটপাত, এমনকি সৈকতে নামার পথও দখলে নিয়েছে ভাসমান দোকানদাররা।

পুরান ঢাকা থেকে আসা রাকিবুল দম্পতি বলেন, ‘সাগর দেখতে এসেছিলাম, কিন্তু সৈকতের মুখটাই খুঁজে পাইনি। চারদিকে দোকান, টমটম আর রিকশা। বসার জায়গা পেলেও চারদিক থেকে হকারদের ডাকে বিরক্ত হতে হয়েছে।’ বীচে নামতে গিয়ে আর পথ খুঁজে পাইনা। রিকশা ও টমটমের দখলে প্রবেশ পথ।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে কক্সবাজারে ঘুরতে আসা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়া বলেন, ‘সময় পেলেই বন্ধুরা মিলে ঘুরতে চলে আসি। কিন্তু, এত সুন্দর একটি পর্যটন এলাকায় যেন কোন অভিভাবক নেই। যে যার মত করে ফুটপাত সড়ক দখল করে দিব্যি ব্যবসা করছে। কোথায় পার্কিং, কোথায় শৃঙ্খলা কিছুই’তো দেখলাম না।’

ঢাকা থেকে আসা আরেক পর্যটক (পিপি) এডভোকেট রহিম বলেন, ‘সময় পেলে কক্সবাজার ঘুরতে আসি কিন্তু, সৈকতের সৌন্দর্য দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাসমান হকার, যত্রতত্র পার্কিং এবং ছোট ছোট শিশুদের উৎপাতে সৈকতে আসাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। কোন নিয়ম শৃঙ্খলা যেন নেই সৈকতে।’

ফ্রিশফ্রাই দোকানিরা সুগন্ধ পয়েন্টের সমুদ্র তীরের ২ পাশে দখলে নিয়েছে। সেখান থেকে ফেলা ময়লা পুরো সমুদ্র সৈকত আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। ময়লা রাখার নিদিষ্ট কোন বক্স নাই। বক্স থাকলেও ময়লা রাখতেছে যততত্রভাবে। দেখার যেন কেউ নাই। 

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, সুগন্ধা পয়েন্টসহ সৈকতের কয়েকটি স্থানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভাজা মাছ ও কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে। এসব খেয়ে প্রতিনিয়ত পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অভিযোগ আছে, বাজার থেকে কমমূল্যে পচা মাছ কিনে এনে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা ভ্যানে করে পর্যটকদের কাছে ভাজা মাছ ও কাঁকড়া বিক্রি করেন। এমনকি পর্যটকদের কাছ থেকে দামও রাখা হয় বেশি। ধুলাবালি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও খোলামেলা জায়গায় এভাবে ভাজা মাছ বিক্রি হয়।

রোববার (২ নভেম্বর) সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, কলাতলী প্রধান সড়ক থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট ঢুকতে দু’পাশে চারটি দোকানের সারি সারি লাইন। যেখানে -ফিস ফ্রাই, ঝিনুক, বিরিয়ানি, মালাই চা, কাপড়ের দোকান, ডাব, ডিমের দোকানসহ প্রায় ৩০০-৩৫০ টি ভাসমান দোকান চোখে পড়ে। পথচারীদের হাঁটার ফুটপাত নেই বললেই চলে। এক মিনিট হেঁটে গেলাম টুরিস্ট পুলিশের বক্সের সামনে। উত্তর এবং দক্ষিণে একশো গজের মধ্যে টমটম এবং রিকশা (ব্যাটারিচালিত) অন্তত ৫০ টি। দক্ষিণে কড়াই রেষ্টুরেন্ট’র সামনে ৪০ ফুট সড়কের মধ্যে রয়েছে মাত্র ১০ ফুট। তিনটি ডাবের দোকান, ঝিনুক, আইসক্রিমসহ আরও কয়েকটি ভাসমান দোকান। অনেকটা গাদাগাদি অবস্থায় সৈকতে নামছে পর্যটকরা। টুরিস্ট পুলিশ বক্সের দক্ষিণে নামতে দু’টি চশমার দোকান, খেলনাসহ বিভিন্ন প্রকারের দোকান। মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা থাকলে-ও বালিয়াড়ির ৮০ শতাংশ দখলে নিয়েছে ভাসমান হকাররা। সড়ক থেকে বীচ পর্যন্ত দুইশো গজের মধ্যে অন্তত শতাধিক দোকান বসেছে। পর্যটকরা বীচ পর্যন্ত সুন্দর করে হেঁটে যাবে সেই পরিস্থিতি সুগন্ধা বীচে নেই। এবার একটু সুগন্ধা চৌমুহনী থেকে একটু উত্তরে চোখ পড়ে। 

অভিযোগ পাওয়া গেছে, শুধু সুগন্ধা চৌমুহনী ঘিরে গড়ে উঠা ৫ শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক দুই শিফটে টাকা তোলা হয়। টাকার বিনিময়ে বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে হকাররা। বৈধ দোকানদার থেকে অবৈধ এসব ব্যবসায়ীর দাপট দ্বিগুণ। তাদের একটি সিন্ডিকেটও রয়েছে। পজিশন অনুযায়ী নতুন দোকান বসিয়ে দিতে এককালীন মোটা অংকের টাকাও দিতে হয়। সবমিলিয়ে সুগন্ধা পয়েন্টর যেন হ য ব র ল অবস্থা। অভিভাবকহীন এই পয়েন্টটি পর্যটকের পছন্দের তালিকায় থাকলেও শৃঙ্খলা না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছেন কলাতলী এবং মেরিন ড্রাইভ সড়কের দিকে। 

সুগন্ধা বীচের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বছরে লাখ টাকা দিয়ে বাৎসরিক দোকান ভাড়া নিয়েছেন তারা। লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল দোকানে তুলেছেন। এখন ভাসমান দোকানীদের কারণে তাদের আশানুরূপ ব্যবসা হয়না। তারা দৈনিক দুই শিফটে টাকা দিয়ে দোকান বসিয়েছে। সড়কের মাঝখানে, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চললেও তা যেন লোক দেখানো। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, ‘সামনে মৌসুম আসছে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়ক দখলমুক্ত করা হবে। সব ভাসমান দোকান উঠে যেতে হবে। পর্যটকদের সমস্যা হবে এমন কিছু বরদাস্ত করা হবে না। পর্যটন সেল থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। যারা অবাধ্য হচ্ছে, তাদের দোকানের ব্যাটারী জব্দ করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে ভাসমান দোকান উচ্ছেদে বড়সড় অভিযান চালানো হবে।’

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘সৈকতের শৃঙ্খলা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন মিটিং’র মধ্যে দিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়। অপরাধ দমন থেকে শুরু করে, মানবিক সেবা নিয়েও কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ।’ 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যারা সৈকতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে তাদের কার্যক্রম নেই। টুরিস্ট পুলিশ একা কি করবে?  সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। 


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.