× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রদীপের আলোয় চীবর বুননে ব্যস্ত বৌদ্ধ নারীরা

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান

০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম

রাতের নিস্তব্ধতায় বাজে তাঁতের সুর। প্রদীপের মৃদু আলোয় ব্যস্ত হাতে ঘুরছে চাকার মতো সূতা। বৌদ্ধ নারীরা বুনে চলেছেন চীবর যা ভিক্ষুদের দান করা হবে পরদিন, বুদ্ধের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধার অর্ঘ্য হিসেবে। তাঁতের প্রতিটি সূতা যেন ভক্তির গল্প বলে, শ্রমে মিশে থাকে পুণ্যের দীপ্তি।

বুদ্ধের সময়ে বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুদের নতুন চীবর দান করা হতো। বলা হয়, একবার কিছু ভিক্ষু দীর্ঘ বর্ষাবাস শেষে বুদ্ধের দর্শনে যান। তখন তাদের জন্য অনুগামী উপাসক-উপাসিকারা একদিনে কাপড় বুনে তৈরি করে দেন চীবর। সেই থেকেই শুরু হয় কঠিন চীবর দান প্রথা - একদিনের মধ্যেই বুনন, রঙ করা, শুকানো ও সেলাই শেষ করে দান করার ধর্মীয় রীতি। এই কঠোর সময়সীমার কারণে দানটিকে বলা হয় “কঠিন চীবর দান” যা আজও বৌদ্ধ সমাজে পুণ্যের সর্বোচ্চ প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।

চীবর তৈরির কাজ শুরু হয় সুতার প্রস্তুতি দিয়ে। গাছের ছাল, ফুল ও প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি হয় রঙ। সেই রঙে সুতাকে রাঙানো হয়, তারপর তাঁতে বসিয়ে সূক্ষ্ম বুননে তৈরি হয় চীবর। পুরো প্রক্রিয়াটি যেন ধর্মীয় সাধনারই অংশ। রাতভর চলে এই কাজ। প্রদীপের আলোয়, তাঁতের তাল মিলিয়ে নারী-পুরুষ একত্র হয়ে কাজ করেন একজন সুতা টানেন, আরেকজন বুনেন, কেউ বা সেলাই করেন। তাঁতের শব্দে মিশে থাকে প্রার্থনার মৃদু সুর।রাত্রির এই বুনন কেবল শ্রম নয়, এটি এক ভক্তিমূলক সাধনা। চাঁদের আলো আর প্রদীপের ঝিলিকে তারা যেন বুনে চলেছেন বিশ্বাসের গল্প। রাত গভীর হলেও মন থাকে প্রশান্ত।

চীবর বুনতে আসা নারীরা জানান, চীবর দান শুধু এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়এটি জীবনের সঙ্গে ধর্মের সংযোগের প্রতীক। ভিক্ষুরা চীবর গ্রহণ করেন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে, আর দাতা উপাসক-উপাসিকারা অনুভব করেন পবিত্রতার শান্তি। রাত্রির এই বুনন কেবল শ্রম নয়, এটি এক ভক্তিমূলক সাধনা। চাঁদের আলো আর প্রদীপের ঝিলিকে তারা যেন বুনে চলেছেন বিশ্বাসের গল্প। রাত গভীর হলেও মন থাকে প্রশান্ত। রাত যতই বাড়ে, মন ততই শান্ত হয়। মনে হয় বুদ্ধ আশীর্বাদ করছেন। আর সকালের আলো ফুটতেই প্রস্তুত হয় চীবর যা পূজ্য ভিক্ষুদের হাতে দান করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবানে কেন্দ্রীয় রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে সুর্য নামার সাথেই চীবর বুননের জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা শতাধিক নারীরা। কেউ দল বেধে আবার কেউ গ্রাম পর্যায়ের। ধর্মীয় এই অনুষ্ঠানে নিজেদের পরিশুদ্ধ করতে অংশ নিচ্ছেন অনেকেই। স্বচ্ছ তুলা থেকে সুতা বের করে তৈরী হচ্ছে চীবর বুনন। সেখানে শতাধিক নারী দলবেধে চীবর বুননে অংশ নিচ্ছেন। কেউ কেউ চাকা ঘুরে পেচানো হচ্ছে সুতার গোলাকার। অন্যদিকে রাতভর নিজেদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য ঢোলে নৃত্য পরিবেশ করছেন। মুলত চীবর বুনন এক রাতে শেষ করে ভোর সকালে বুদ্ধ ভিক্ষুদের উদ্দ্যেশে দান করা হবে। পুরো এক বছরের পর আসে এই চীবন বুনন। এতে পুরো বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকে বৌদ্ধধর্মালম্বীরা।

চীবর বুনতে মাঝের পাড়া, সাতকমল পাড়া,চিম্বুকসহ বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লা থেকে এসেছে অনেক নারী। সেখানে কথা হয় মেপ্রুমা, সুষ্মিতা তংচঙ্গ্যা ও রংলে ম্রোর সাথে। তারা জানান, আমরা চীবর বুনতে এসেছি দলবেধে। সকালে যারা আগে চীবর বুনে দান করতে পারবে তারাই প্রথম হবে। চীবর বুনন প্রতিযোগিতা নয় এটি জীবনের সঙ্গে ধর্মের সংযোগের প্রতীক। যে দান শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে প্রদান করা হয়,তা দাতার জীবনে শান্তি ও শুভফল বয়ে আনে।

রাজগুরু বৌদ্ধবিহারে বৌদ্ধভিক্ষু নাইদা চেরিয়া বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নতুন সুতো থেকে চীবর (ভিক্ষুদের পোশাক) তৈরি করে ভিক্ষুসংঘকে দান করেন, যা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলে বিবেচিত হয়। এই উৎসবের বিশেষত্ব হলো, এক দিনের মধ্যে তুলা থেকে সুতো তৈরি, রং করা এবং পোশাক তৈরি করে ভিক্ষুদের দান করতে হয়। বলেন, কয়েক বছর শতাব্দী  আগে গৌতম বুদ্ধ সিদ্ধার্থকে ১২ ঘন্টা মধ্যে চীবর বুনে দান করেছিলেন বলে তিনমাস বর্ষাবাস শেষে এই ধর্মীয় কঠিন চীবর দান পালন করা হয়।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.