পরিবহন সংকটে ভুগছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত রাজধানীর স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ঐতিহ্যের সমারোহে ঘেরা এই কলেজটিতে পরিবহন (বাস) মাত্র ২টি, যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অতি সামান্য।
রাজধানীর প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোর মধ্যে কবি নজরুল সরকারি কলেজ অন্যতম। শিক্ষার মান, কলেজের পরিবেশ ও সকল অবকাঠামোর দিক দিয়ে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছেন এই কবি নজরুল সরকারি কলেজ। তবে পরিবহন সংকট যেন শিক্ষার্থীদের এক চরম ভোগান্তির কারণ। কলেজটিতে মাত্র দুটি বাস রয়েছে, নাম ‘অগ্নিবীণা’ এবং ‘বিদ্রোহী’ প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থীর তুলনায় যা খুবই কম।
পরিবহনের ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ কলেজটির প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী। চোখ জুড়ানো কারুকার্যে নির্মিত একাধিক ভবন থাকলেও নেই পর্যাপ্ত পরিবহন। কালের বিবর্তনে পরিবর্তন হয়েছে কলেজটির সকল অবকাঠামো, উন্নত হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার এর মাঝেও পরিবহন দূর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি বছর ভর্তির সময় আমাদের থেকে পরিবহন ফি বাবদ অর্থ নিয়ে থাকে তাহলে সেই অর্থ কোথায় যায়? কলেজে প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে প্রতি বছর তাদের ভর্তির সময় কত টাকা ওঠে পরিবহন ফি থেকে? আর সেই টাকা কোথায় যায়? বছরে প্রায় এক কোটি টাকার বেশি অর্থ আসে পরিবহন ফি থেকে সেই অর্থ দিয়ে কি করা হয় এর কিছুই আমরা জানিনা। আমরা শিক্ষার্থীরা পরিবহন ফি বাবদ অর্থ দিয়ে থাকি কিন্ত পরিবহন সেবা কিছুই পাই না, এতে করে আমাদের কলেজের মান কমে যাচ্ছে, কারণ শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো কলেজে আসতে পারে না তাই তাদের ক্লাস করা হয় না আর এই মাশুল গুনতে হয় পরীক্ষার সময়। আমরা আমাদের কলেজে অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই।
বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রবিন হোসাইন বলেন, ঢাকার অতি সন্নিকটে অবস্থিত কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মাদারিপুর জেলা। ঢাকার এত নিকটবর্তী জেলা হওয়া সত্ত্বেও কলেজের পরিবহন সেবা থেকে সম্পুর্ণ বঞ্চিত আমরা। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হবার পর আমাদের মনে জেগেছিল এক নতুন আশা, আমরা ভেবেছিলাম হয়তো আমাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে, কিন্ত ঘটলো তার বিপরীত, এখন না পাচ্ছি কলেজ পরিবহন (বাস), আর না পাচ্ছি ঠিক মত পাবলিক পরিবহন (বাস)! কলেজে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে পরিবহন যুদ্ধ। আর এভাবেই চলছে আমাদের শিক্ষা জীবনের এক বিরক্তিকর অধ্যায়।
একই বিভাগের সুজিত কুমার দাস বলেন, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোর মধ্যে কবি নজরুল সরকারি কলেজ অন্যতম একটি কলেজ। এত প্রাচীনতম কলেজ হওয়া সত্ত্বেও এই কলেজে মাত্র দুটি কলেজ বাস রয়েছে যা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত দু:খজনক। যাতায়াতের জন্য কলেজ বাসের ভাড়ার টাকা তারা ভর্তির সময় নিয়ে রাখলেও প্রায় শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, পর্যাপ্ত বাস না থাকার কারণে। আমাদের কলেজে আসতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। কলেজ প্রশাসনকে অনুরোধ করবো আমাদের কলেজে বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতটা সহজ করার জন্য। আমরা খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, পাবলিক পরিবহনে করে কলেজে আসা যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা আমরা মেয়েরাই বুঝি। অনেক সময় এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় যে ইচ্ছে করে আর কলেজেই আসবো না! আমরা তো পরিবহন ফি প্রতিবছরই দিয়ে আসছি তাহলে আমাদের সেই টাকাগুলো কি কাজে লাগাচ্ছে? কেন আরও বাস কেনা হচ্ছে না? কলেজ প্রশাসন এখানে নিশ্চুপ কেন? যদি আমাদের পরিবহন সেবা দিতে নাই পারে তাহলে আমাদের থেকে পরিবহন ফি কেন নেয়? আমরা এর সঠিক সমাধান চাই এবং খুব দ্রুতই কলেজ প্রশাসনকে এই সমাধান করতে হবে।
শিক্ষার্থী আনিকা আক্তার বলেন, এমন ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজে বাসের এমন দুর্ভোগ যা আমাদের জন্য সত্যিই খুব লজ্জাজনক। যেখানে আমাদের কলেজের অনেক পরে প্রতিষ্ঠিত কলেজগুলোতেও রয়েছে একাধিক বাস সেখানে আমাদের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে বাস মাত্র দুটি! আমরা পরিবহন ফিও দিচ্ছি আবার আমাদের কলেজে আসতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। তাহলে আমাদের কাছ থেকে পরিবহন ফি কেন নেয়? আমরা কলেজ প্রশাসনের কাছে এর স্পষ্ট জবাব চাই এবং যতদ্রুত সম্ভব আমাদের এই সমস্যার সমাধান কলেজ প্রশানকে দিতে হবে।
শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, কিছু কিছু সময় আমাদের কলেজের কোনো বাস আছে বলে মনেই হয় না! কেননা অনেক সময় দেখি কলেজের বাস লোকাল ভাড়ায় চালিত হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা পরিবহনের জন্য কলেজে আসতে পারে না সেখানে কলেজের বাস যদি লোকাল যাত্রী তুলে ভাড়ায় চালিত হয় এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক।
বাস চালকদের বেতন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্রোহী বাসের চালক বলেন, আমাদের বেতন আমাদের অফিস কতৃপক্ষ দেন, আমাদের বেতনের সাথে কলেজ প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কলেজের পরিবহন সংকটে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে সেটা আমরাও বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের বাস কেনার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। সরকারের কাছে আমরা অনুদান চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি প্রয়োজনে আবারও পাঠাবো, যদি সরকার আমাদের অনুদান দেয় তাহলে এই সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
পরিবহন ফি বাবদ অর্থের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দুটি বাস চালাচ্ছি সেখানে খরচ আছে। আমরা চেষ্টা করছি। যদি অনুদান পাই তাহলে নতুন বাস নামাতে সক্ষম হবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
