× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হিমাগার থেকে ৫৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি

মো. আমানুল্লাহ আমান, জয়পুরহাট

১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:২৫ পিএম

জয়পুরহাটের তিনটি হিমাগারের বিরুদ্ধে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার বস্তা বীজ আলু ছিল।

ভুক্তভোগী কৃষকরা আলু তুলতে এসে জানতে পারেন, তাদের সংরক্ষিত আলু আগেই বিক্রি করে দিয়েছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

হিমাগার তিনটি হলো পাঁচবিবি উপজেলার চানপাড়া এলাকার ‘সাথী হিমাগার লিমিটেড’, ক্ষেতলাল উপজেলার ভাসিলা এলাকার ‘মোল্লা হিমাগার লিমিটেড’ ও একই উপজেলার আয়মাপুরের ‘হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার’। এর মধ্যে সাথী হিমাগার প্রায় ২০ হাজার বস্তা, মোল্লা হিমাগার ৩০ হাজার বস্তা ও হাফিজার রহমান হিমাগার প্রায় ৫ হাজার বস্তা আলু কৃষকদের না জানিয়ে বিক্রি করেছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে একটি হিমাগারে গিয়ে আলু বিক্রির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এখন হিমাগারগুলো বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের টাকা দিয়ে বিষয়টি রফাদফা করার চেষ্টা করছে। আর যারা বীজ আলু হারিয়েছেন, তাদের হিমাগারের নিজস্ব বীজ আলু থেকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

পাঁচবিবির সাথী হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষণ করা আলু না পেয়ে কৃষকেরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের কক্ষে ভিড় করছেন। এ সময় কৃষকেরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক জানান, তারা সাথী হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। আগামী ১৫ নভেম্বর সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হবে। আজ আলু নিতে এলে প্রথমে হিমাগার কর্তৃপক্ষ তাদের দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখেন। পরে এক মাস আগে হিমাগার থেকে ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রির কথা তাদের জানানো হয়।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দেওনালা গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম বলেন, আমি সাথী হিমাগারে ৬০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। আমার আলু এক মাস আগে বিক্রি করে দিয়েছে। না জানিয়ে এমন কাজ করা সম্পূর্ণ অন্যায়। আমি আলু ফেরত চাই। 

একই অভিযোগ করেন পাঁচবিবির কৃষক জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি সাথী হিমাগারে ১০০ বস্তা বীজ আলু রেখেছিলাম। রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করেছি, কিন্তু এখন বীজই নেই। হিমাগার কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে আলু বিক্রি করেছে! এখন আমি কিভাবে জমিতে আলু লাগাব?

সাথী হিমাগারের ব্যবস্থাপক শামসুল হক দাবি করেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি আলু রাখায় কিছু নষ্ট হতে শুরু করেছিল, তাই বাধ্য হয়ে ২০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, “আমরা কৃষকদের নোটিশ দিয়েছিলাম এবং এখন বাজারমূল্যে টাকা পরিশোধ করছি। কেউ বীজ আলু চাইলে তাদের হিমাগারে সংরক্ষিত কিছু বীজ আলু দেওয়া হচ্ছে।’’

জয়পুরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত তিনটি হিমাগারের বিরুদ্ধে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের না জানিয়ে আলু বিক্রি করা অপরাধ। বিষয়টি তিনি নিজে তদন্ত করছেন। তিনি জানান, মোল্লা হিমাগার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ৩০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছে। এখন তাদের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে মোল্লা হিমাগারের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যেসব ব্যবসায়ীর অনেক বেশি আলু সংরক্ষিত আছে, তাদের অনুমতি নিয়ে অর্ধেক আলু বিক্রি করা হয়েছে। ‘আমরা বড় বড় ৪৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে আলু বিক্রি করেছি।’

অন্যদিকে হাফিজার রহমান বীজ হিমাগারের ব্যবস্থাপক বেলাল সরদার বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের রাখা ৪ হাজার ৮০০ বস্তা আলু বিক্রি করেছি। ‘হিমাগারে অনেক বেশি আলু ছিল। আগে আলু বিক্রি না করলে শেষ পর্যন্ত সব আলু হিমাগার থেকে বের করা কষ্টসাধ্য হবে বলে না জানিয়ে কিছু আলু বিক্রি করে দিয়েছি। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হিমাগার মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের আগে যেন কোনো কৃষকের আলু বিক্রি না করে। এখন যারা আলু বিক্রি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।’


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.