× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সাততলা ভবন ঝুঁকির মুখে, আতঙ্কে পথচারী

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী

১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম

নীলফামারী শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মাধার মোড়ে অবস্থিত সাততলা ভবনটি এখন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ভবনের অংশ অধিগ্রহণ করে মালিককে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ০৪৪ টাকা। তবে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই দিন ও রাতে শ্রমিক দিয়ে ভবনের বর্ধিত অংশ ভাঙার অভিযোগ উঠেছে মালিক রাকিব হাসান মিশুকের বিরুদ্ধে। এতে ভবনের মূল কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ায় আশপাশের ব্যবসায়ী, ভাড়াটিয়া ও পথচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের বর্ধিত অংশের ভাঙার কাজ শেষ হলেও অবশিষ্ট প্রধান কাঠামোতে ফাটল, প্লাস্টার খসে পড়া ও দেয়াল নড়াচড়ার চিহ্ন স্পষ্ট। নিচতলার অনেক দোকানের দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মাঝরাতে ভবন ভাঙার সময় এমন শব্দ হতো যেন ভূমিকম্প হয়েছে।

মাধার মোড়ের ব্যবসায়ী মামুন বলেন, “রাতে ভবন ভাঙার সময় দোকান কেঁপে উঠত। আমাদের দোকানের দেয়াল ফেটে গেছে। প্রতিদিনই আতঙ্ক নিয়ে দোকান খুলি।”

একই এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, “দিনে-রাতে ভাঙার সময় আশপাশ কাঁপতো। এখন সবাই বলছে ভবন আরও দুর্বল হয়ে গেছে।”

পথচারী মো. মানিক বলেন, “এই ভবনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানেই ভয়। যেকোনো সময় কিছু হয়ে যেতে পারে।”

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. নায়িরুজ্জামান বলেন, “জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভবনটি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, নিয়মভঙ্গ হয়েছে কিনা—সবকিছু তদন্তে যাচাই করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা- এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) এবং গণপূর্ত বিভাগের মধ্যে মতবিরোধ দেখা গেছে। সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “ভবন অনুমোদনের এখতিয়ার পৌরসভার।”

অন্যদিকে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ভবন ভাঙা সওজের আওতায় পড়ে। আমরা শুধু কারিগরি পরামর্শ দিই।”

ভবনটির মালিক রাকিব হাসান মিশুকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সরাসরি দেখা করবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তদন্তে জানা গেছে, ভবন ও জমিটি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, নীলফামারী শাখার কাছে মর্টগেজ রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মনির বলেন, “মালিক ঋণ পরিশোধ না করায় মামলা করা হয়েছে। ভবনের নিরাপত্তা বা ঝুঁকি বিষয়ে মন্তব্য করা আমাদের এখতিয়ারের বিষয় নয়।”

নীলফামারী পৌরসভার প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম জানান, “ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিদিন শতাধিক পথচারী ও ক্রেতা ভবনটির নিচ দিয়ে যাতায়াত করেন। পাশাপাশি নিকটবর্তী দোকানপাট ও ক্লিনিকও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুমতি ছাড়া এবং প্রযুক্তিগত তদারকি ছাড়া ভবনের বিম, স্তম্ভ বা দেয়াল ভাঙলে কাঠামোগত ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ভবন ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন - ভবনটি অবিলম্বে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে চারদিক সুরক্ষিত করা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.