মা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। দুনিয়ার সব মানুষের বিকল্প কল্পনা করা সম্ভব হলেও পৃথিবীতে বাবা-মায়ের বিকল্প মেলানো সম্ভব নয়। মা-বাবা উভয়ই সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ। যে বাবা প্রবাস জীবনে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করলেন, সেই সন্তানের অত্যাচারে বাড়িঘর ছেড়ে বাবা-মা আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হাসপাতালের বিছানায় জীবনযাপন করছেন।
সম্প্রতি এমন একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে ভোলার লালমোহন উপজেলায়। পৌরসভার বাসিন্দা আবুল কাশেম দীর্ঘ সতেরো বছর প্রবাস জীবনে নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে সংসারের ঘানি টানা একমাত্র ব্যক্তিটি আজ সন্তানের অত্যাচার ও মারধরের শিকার হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেলে আশ্রয় নিয়েছেন। জীবনের শেষ বয়সে এসে মরনব্যাধি রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও ছেলের অত্যাচার ও মারধরের শিকার হয়েছেন তারা।
বর্তমানে আবুল কাশেম লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
জানা গেছে, আবুল কাশেমের একমাত্র ছেলে মো. রাশেদ মাহমুদ আ’লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের অনুসারী ছিলেন তিনি। লালমোহন উপজেলার ৪ নং ওয়ার্ড পৌর যুবলীগের সহ সভাপতি প্রার্থীও ছিলেন। এছাড়া আ’লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে তার ছবি ও পোষ্টার রয়েছে। যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভুক্তভোগী আবুল কাশেম জানান, দীর্ঘ সতেরো বছর প্রবাসে থাকার পর হঠাৎ করে একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর প্রবাস থেকে দেশে ফেরার জন্য ছেলে রাশেদের কাছে টাকা চান তিনি। কিন্তু ছেলে কোন প্রকার টাকা পয়সা দিতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেন। এমনবস্থায় আবুল কাশেমের বড় মেয়ের জামাই টাকা পয়সা ধার করে তাকে দেশে আনার সকল ব্যবস্থা করেন। ২০১৮ সালে তিনি দেশে আসার পর অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলে তার বড় মেয়ের জামাই নিজ শাশুড়ী ও তার শালীর খরচসহ সংসারের সকল ব্যয়ভার বহন করেন। কিন্তু ছেলে বাবা মায়ের কোন প্রকার খরচ বহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে আবুল কাশেমের মেয়ের জামাই তার চিকিৎসা খরচ ও সংসার চালাতে গিয়ে প্রায় পঁচিশ লাখ টাকা ঋন হন।
মেয়ের জামাইয়ের ঋন পরিশোধ করতে আবুল কাশেম তার বসতবাড়ি বড় মেয়ের নামে লিখে দেন। মেয়ে যেন বাড়ি বিক্রি করে বাহিরের ঋণ পরিশোধ করতে পারে। পরবর্তীতে কাশেমের বড় মেয়ে বাড়ি বিক্রি করতে গেলে কাশেমের ছেলে রাশেদ জমি বিক্রি করতে বাঁধা দেয় এবং নানা রকম হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনায় জাতীয় আইনগত সহয়তা প্রদান সংস্থা লিগ্যাল এইডে অভিযোগ করেও কোন প্রকার সমাধান পায়নি আবুল কাশেমের পরিবার।
আবুল কাশেমের ছোট মেয়ে জানান, প্রবাস থেকে ফিরে আমার বাবা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তখন থেকেই আমার বড় বোনের জামাই আমাদের সংসারের সকল খরচ দেয়। আমার ভাই আমাদের খরচ দেয়া তো দূরের কথা উল্টো আমার অসুস্থ বাবা মায়ের গায়ে হাত তোলে।
আবুল কাশেমের স্ত্রী বলেন, অনেক কষ্ট করে সন্তানকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করিয়াছি। ছেলের পছন্দ মতো তাকে বিয়ে করিয়েছি। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই রাশেদ প্রায় সময়ই আমাকে ও আমার স্বামীকে মারধর করতো। আমাকে মেরে আমার আংগুল ভেঙে ফেলছে। এজন্য আমি এক সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. রাশেদ মাহমুদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আমাদের সব জমি বিক্রি করে আমাকে নিস্ব করে দিয়েছে। আমার ভগ্নিপতি কৌশলে আমার বাবার থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা নিয়েছে। এখন আমি যে বাসায় বসবাস করি তারা সেই বাসাটাও বিক্রি করতে চায়। আমার বাবা যখন প্রবাসে ছিল তখন এই বাড়িটা আমি তৈরি করেছি। আমি আমার বাবার থেকে চার পয়সার ও সহায়তা পাইনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
