× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শীতের হাওয়ায় খেজুর রসের সুবাস মানিকগঞ্জে গুড়ের মৌসুম শুরু

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৪ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

মানিকগঞ্জে নেমে এসেছে শীতের আগমনী বার্তা। সকাল-সন্ধ্যায় হালকা শীতের ছোঁয়া, ভোরের কুয়াশা আর শিশিরসিক্ত প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমন। আর শীতের শুরুর এ মৌসুমেই মানিকগঞ্জজুড়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের উপযোগী করতে প্রতিদিন ভোরে তারা দা–নলি–রশি–বালধারা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন মাঠে ও রাস্তার পাশের গাছগুলোর কাছে।

একসময় জেলার মানুষের শীতকালীন আয়ের অন্যতম উৎস ছিল খেজুর গাছ। কিন্তু এখন সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। বিভিন্ন এলাকার খেজুর গাছের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ায় এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জেলার ৭টি উপজেলাতেই খেজুর গাছ রয়েছে, তবে সংখ্যায় দিন দিন কমছে। বিশেষ করে সাটুরিয়া উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে—একসময় অসংখ্য খেজুর গাছ থাকলেও এখন অনেকেই এগুলো ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে খেজুর গাছের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

মানিকগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ রয়েছে হরিরামপুর উপজেলায়। শীত আসলেই এখানকার গ্রামগুলোতে গুড় তৈরির ধুম পড়ে যায়। দেশের নামকরা ‘হাজারী গুড়’ হরিরামপুরেই উৎপাদিত হয়, যা স্বাদ ও গুণে অনন্য। স্থানীয়দের দাবি, খাঁটি হাজারী গুড়ের সুনাম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

জেলার কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়—একসময় বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছের বাগান করা হতো এবং গুড় তৈরিকে কেন্দ্র করে গ্রামাঞ্চলে পাটালি উৎসবের আমেজ থাকত। এখন সেই দৃশ্য আর তেমন দেখা যায় না। গাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় কৃষকরা নতুন করে খেজুর গাছ রোপণে অনাগ্রহী। ফলে যা আছে সেগুলোও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।আগে মানিকগঞ্জ থেকে প্রচুর খেজুরের গুড় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং বাইরেও রপ্তানি হতো। এখন রপ্তানির পরিমাণ অনেক কমে গেছে।খেজুর গাছ সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চাষিদের উন্নতমানের গুড় উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের নতুন করে খেজুর গাছ লাগাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

গত বছর মানিকগঞ্জ থেকে দেশীয় বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও উন্নতমানের সুস্বাদু খেজুরের গুড় রপ্তানি করা হয়েছে, যা নতুন আশার জোগান দিয়েছে।

খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করে বিশেষ পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করা হয়। ভোরবেলার রস সবচেয়ে টাটকা ও সুস্বাদু।খেজুরের রসে থাকে ১৫–২০% দ্রবীভূত শর্করা, প্রচুর খনিজ, আয়রন এবং হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিকারী উপাদান।

খেজুরের গুড় আখের গুড়ের তুলনায় বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এতে প্রোটিন, মিনারেলসহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। দুর্বল শরীর শক্তিশালী করতেও খেজুরের রস কার্যকর।

শীতের আগমন মানেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস আর গুড়ের মিষ্টি সুবাস। কিন্তু খেজুর গাছের ক্রমহ্রাসমান সংখ্যা এই ঐতিহ্যকে হুমকিতে ফেলছে। যথাযথ উদ্যোগ, সচেতনতা ও গাছিদের প্রণোদনা বাড়ানো গেলে মানিকগঞ্জ আবারও ফিরে পেতে পারে তার হারানো গুড় শিল্পের সোনালি দিন।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.