কলাগাছকে বলা হয় ঔষধি গাছ। কলার কাঁদি সংগ্রহের পর দ্বিতীয়বার এতে আর ফল ধরে না। গাছটি কেটে ফেলা হয়। এতে নরম কাণ্ডের গাছটির আর কোনো ব্যবহার থাকে না। তবে এবার ফেলনা সেই কলাগাছই হয়ে উঠেছে মহামূল্যবান। এ থেকেই তৈরি হচ্ছে গো-খাদ্য।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল হাজিরহাট (কানি চরিতাবাড়ী)। নদী ভাঙন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এ জনপদে দিন কাটে সীমাহীন অভাব-অনটনে। তবে এখানকার কৃষক আইয়ুব মিয়ার চোখে এখন নতুন আশার আলো। ফেলনা কলাগাছ থেকে গবাদিপশুর জন্য গো-খাদ্য তৈরি করে তিনি আঁকছেন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন।
আইয়ুব মিয়ার সংসারে একসময় অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। কৃষিকাজে খরচ বেশি, আয় কম। চরাঞ্চলের দুর্গমতার কারণে আধুনিক প্রযুক্তিও পৌঁছাত না। কিন্তু সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের ‘প্রদৃপ্ত প্রকল্প’-এর সহযোগিতায় হেলেজ (গো-খাদ্য) তৈরির একটি মেশিন হাতে পান তিনি। আর তাতেই শুরু হয় ভাগ্য ফেরানোর গল্প।
মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করা কলাগাছ গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্যে রূপ নেয়। এতে একদিকে গরুর খাবারের সংকট মিটছে, অন্যদিকে ফেলনা জিনিস থেকে তৈরি হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। আইয়ুব মিয়া এখন নিজের পালন করা গবাদিপশুর নিয়মিত খাবার যোগান দেওয়ার পাশাপাশি আশপাশের কৃষকদের কাছেও সরবরাহ করছেন এই গো-খাদ্য।
তিনি জানান, শুরুতে ফেলনা কলাগাছ সংগ্রহ করা হয়। এরপর কলাগাছের পাতা ও অতিরিক্ত অংশ ফেলে দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে মেশিনে দেয়া হয়। মুহুর্তেই সেগুলো চূর্ণ হয়ে যায়। পরে তা সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে দেয়া হয়। শুকানোর পর তাতে ভুষি, নালি ও লবন মিশিয়ে কনটেইনারে করে সংরক্ষণ করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। তিনি আরও জানান, প্রতিটি কলাগাছ থেকে ২-৭ কেজি পর্যন্ত হেলেজ তৈরি করা যায়। প্রতিকেজি হেলেজ ৩৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি করা হয়।
আইয়ুব আলী বলেন, “আগে গরুর খাবারের জন্য চিন্তায় পড়তে হতো। এখন ফেলনা কলাগাছ দিয়েই খাবার তৈরি করছি। এতে খরচ কমছে, গরুও সুস্থ থাকছে। আশা করছি সামনে এই কাজ দিয়েই আমার সংসার চালাতে পারব।”
গ্রামের মানুষও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তারা জানান, আগে কলাগাছ কেটে ফেলে দিতে হতো। এখন তা দিয়েই তৈরি হচ্ছে সম্পদ। একই সঙ্গে চরাঞ্চলের যুবকদেরও এ পেশায় আগ্রহী হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের প্রদৃপ্ত প্রকল্পের মাঠকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগ শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। কারণ টেকসই কৃষির জন্য স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে পশুপালন ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের ‘প্রদৃপ্ত প্রকল্প’-এর মাঠকর্মী আনিসুল হক প্লাবন বলেন, “আইয়ুব আলীকে হেলেজ (গো-খাদ্য) তৈরির মেশিনসহ ৭২ হাজার টাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তার মতো যেন আরও উদ্যোক্তা তৈরি হয় সেটাই আমরা আশা করি।” তিনি আরও বলেন, “চরাঞ্চলে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের খাবার জুটলেও গরুর জন্য খাবার জোটানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সেইসময় এই খাদ্য অনেক বেশি কাজে লাগবে।”
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ পদ্ধতিতে গরুর খাদ্য উৎপাদন করা হলে তাতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে, তেমনি গরুর খদ্য সংকটও কিছুটা দূর হবে। এ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন সারা দেশে ছড়িয়ে দেবার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
