নীলফামারীতে আলুর বাজারদর টানা ধসের মুখে পড়ায় জেলার কৃষি অর্থনীতি মারাত্মক চাপের মধ্যে পড়েছে। হিমাগারে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ আলু উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেকেও আলু বিক্রি করতে হওয়ায় ব্যয় তো দূরের কথা, সংরক্ষণ খরচও তুলতে পারছেন না তারা। ফলে অনেকে আগামী মৌসুমে আলুর আবাদ কমিয়ে দেওয়ার চিন্তাও করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নীলফামারীতে সরকারি ও বেসরকারি ১১টি হিমাগারে বর্তমানে প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। এর মধ্যে কৃষকদের উৎপাদিত আলুর পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। বাজারদর কমে যাওয়ায় কৃষকেরা আলু তুলতে অনাগ্রহী। এতে হিমাগারে জায়গা খালি না হওয়ায় সংরক্ষণ ব্যয় ও বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যাচ্ছে - ফলে মালিকরাও বিপাকে পড়েছেন।
এরই মধ্যে কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে নতুন আলু ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পুরনো আলুর চাহিদা আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা। কেবল কৃষকরাই নয়, ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও।
হিমাগার মালিকদেরও পরিস্থিতি ভালো নয়। উত্তরা বীজ হিমাগারের ব্যবস্থাপক নিরদ চন্দ্র রায় জানান, “কৃষকেরা আলু তুলছে ধীরগতিতে। ফলে জায়গা খালি হচ্ছে না; কিন্তু সংরক্ষণ ব্যয় বাড়ছেই।”
এ অবস্থায় লোকসান কমাতে নতুন পথ খুঁজছেন কৃষকেরা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাথী ফসল হিসেবে সাগর কলা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জ, ডোমার ও জলঢাকায় ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে সাগর কলার আবাদ শুরু হয়েছে এবং ইতিবাচক সাড়া মিলছে।
কৃষকেরা জানান, আলুর ক্ষেতের পরিচর্যা, সেচ ও সার ব্যবস্থাপনার সুবিধা ব্যবহার করেই একই জমিতে সাগর কলা চাষ করা যাচ্ছে। এতে অতিরিক্ত খরচ বাড়ছে না, বরং আয় বাড়ছে দ্বিগুণ। অনিশ্চিত আলুর বাজারে এই চাষ কৃষকের লোকসান সামাল দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
আলুর সাথে সাগর কলা চাষের বিশেষ সুবিধাগুলো হলো, এক জমিতে দুই ফসল থাকায় আয় বাড়ে, ঝুঁকি কমে যায়। আলুর সেচ-সার-পরিচর্যার সুবিধা ব্যবহারে আলাদা খরচ কম হয়। এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। কলা গাছ মাটির আর্দ্রতা ধরে রেখে আলুর জন্য উপকারী পরিবেশ তৈরি করে। সাগর কলার বাজারদর তুলনামূলক স্থিতিশীল হওয়ায় আয়ের নিশ্চয়তা থাকে।
জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাথী ফসল চাষ কৃষকদের লোকসান কমাতে এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কৃষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে জোরদার করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর রহমান বলেন, “এ বছর নীলফামারীতে ৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বীজ আলু রোপণ শেষ হয়েছে। শীগ্রই নতুন আলু বাজারে আসবে। দাম ভালো থাকলে কৃষকরা কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।” তিনি আরও বলেন, “সাথী ফসল হিসেবে সাগর কলার প্রসার কৃষকদের লোকসান কাটিয়ে ওঠার ভালো উপায় হতে পারে।”
কৃষি অর্থনীতিবিদদের মতে, আলুর বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা, পাইকারি পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ নীতি পুনর্বিন্যাস করা জরুরি। পাশাপাশি বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে সাথী ফসল চাষ কৃষকদের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সার্বিকভাবে নীলফামারীর কৃষকেরা এখন দুই দিকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন-হিমাগারের পুরনো আলুর লোকসান সামলানো এবং সাগর কলা চাষকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তবে সাথী ফসল হিসেবে সাগর কলার সফল চাষ এ সংকটের মধ্যেই কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার দিশা দেখাচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
