জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী পাখিতলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা স্থানীয়দের কাছে ‘জামাই মেলা’ নামেও পরিচিত। বহু প্রাচীন এ মেলাকে ঘিরে সকাল থেকেই গ্রামজুড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। দূরদূরান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষজন মেলাপ্রাঙ্গণে ভিড় করছেন। উপজেলার আয়মাপুর গ্রামে গতকাল শনিবার (১৫ নভেম্বর) প্রতিবছরের ন্যায় এবারেও অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা।
মেলায় শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য উঠেছে রঙিন নাগরদোলা, চড়কি ও বিভিন্ন রাইড। তাদের উচ্ছ্বাসে মেলার চারদিক আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বসেছে হস্তশিল্পের পসরা—কাঠ, বাঁশ, মাটির তৈরি খেলনা, ঘর সাজানোর সামগ্রী, বাঁশের ডালি-চালনি, নানান ব্যবহার্য জিনিসপত্র। চারপাশ সরব হয়ে উঠেছে রঙিন মিঠাই, জিলাপি, ছানামিঠাইসহ ঘরোয়া মিষ্টির গন্ধে।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। স্থানীয় লাঠিয়াল দলের মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী দেখতে ভিড় জমিয়েছে উৎসুক জনতা। প্রবীণদের মতে, এ ধরনের আয়োজন গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আইমাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এই মেলা করে গিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে আমরা করছি। আগামীতে আমাদের সন্তানরা করবে। ১০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে এ মেলা হয়ে আসছে। মেলার প্রধান আকর্ষণ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের লাঠিখেলা। মেলার দিনে এই গ্রামের ধনী থেকে গরিব সকলেই জামাইদের আমন্ত্রণ করেন।এ কারণেই মেলাটি জামাই মেলা নামেও পরিচিত।
গ্রামের যুবক অনিক হাসান বলেন, প্রতিবছর এ মেলা আমাদের গ্রামকে এক আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে। এদিনটি আমাদের গ্রামে বয়ে আনে আনন্দের এক সীমাহীন ধারা। যারা বাইরে পড়াশোনা, চাকরিরত বা বিবাহসূত্রে বাইরে থাকেন তারাও এদিন গ্রামে এসে সবার সাথে মিলত হোন।
দিনব্যাপী আয়োজিত এই মেলায় সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। গান, নাচ আর নানা পরিবেশনায় মুখর হয়ে উঠবে সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ। উৎসব-উদ্দীপনা, পারিবারিক মিলন আর গ্রামীণ ঐতিহ্যের মিলনে আয়মাপুরের পাখিতলার মেলা আজও গ্রামবাংলার সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।