× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চন্দনাইশে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২০:০০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

চন্দনাইশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কবির হোসেন ও তাঁর অনৈতিক কাজের সহযোগী কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের যাতায়াত ভাতা, নতুন বছরের বই বিতরণ বাবদ খরচ, অযোগ্য গুণি শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, উপবৃত্তি, বিল-ভাউচার পাস, ডিপিএড ট্রেনিং, উৎসব ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন খাতে এ দুর্নীতি করা হয় বলে জানা গেছে। তাছাড়া কথায় কথায় শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ, শিক্ষকদের শোকজ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, দূর্গম এলাকা  ধোপাছড়ি ইউনিয়নের স্কুল গুলোতে ভাড়াটে শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের বিনিময়ে মাসোহারা আদায়সহ নানান দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কবির হোসেনের বিরুদ্ধে।

ক্যাশিয়ার হিসেবে টাকা উঠিয়ে শিক্ষা অফিসারের হাতে তুলে দেন প্রধান শিক্ষক হাবিব উল্লাহ ও ফরমান উল্লাহ। বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে বসে থাকেন শিক্ষা অফিসে, আচার-আচরণে মনে হয় তারাও শিক্ষা কর্মকর্তা।  জানা যায়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কবির হোসেন গত বছরের জুলাই মাসে  চন্দনাইশে যোগদান করার পর থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ‘দুর্নীতির আখড়া’ হিসেবে গড়ে উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলার ৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ৫ মাইল বা ৮কি.মিটারের বাইরে যারা রয়েছে শুধুমাত্র তারাই যাতায়াত ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও পৌরসভাস্থ ১৭টি বিদ্যালয় এবং উপজেলাস্থ হাতেগোনা কয়েকটি বিদ্যালয় ছাড়া বাকী সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ৫ মাইল বা ৮কি.মিটারের বাইরে তাদের বিদ্যালয় দেখিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে যাতায়াত ভাতা তুলে নিচ্ছেন।

নতুন বছরের শুরুতে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বই পেতে তাকে দিতে হয় স্কুল প্রতি ৩০০-৭০০ টাকা করে। পাঠানো পাঠ্যপুস্তকের পরিবহন ব্যয় বাবদ উপজেলার ২৭টি এনজিও বিদ্যালয় থেকে ৭শত টাকা ও সরকারি ৯১টি বিদ্যালয় থেকে ৩শত টাকা করে মোট ৪৬ হাজার ২শত টাকা।

প্রান্তিক পরীক্ষার নাম দিয়ে কোন পরীক্ষা কমিটি ছাড়াই অন্য উপজেলা থেকে প্রশ্নপত্র ধার করে তিনি ১ম,২য় শ্রেণী থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ ২০টাকা ও ৩য়-৫ম শ্রেণী থেকে ৩০টাকা, পাশাপাশি ৫ম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষার পূর্বে মডেল টেষ্ট পরীক্ষার নাম দিয়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ৮০টাকা করে আদায় করেন মোটা অংকের টাকা।

শিক্ষকদের জিপিএফ/ব্যক্তিগত লোন নিতে গেলে প্রতিটি লোন থেকে স্বাক্ষর বাবদ ১হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা তার নিজের পকেটস্থ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যেটি নিয়ম-নীতিমালার বহির্ভুত।

দোহাজারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গাছবাড়ীয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরাতন স্কুল ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন স্থাপনের কাজ চলছে। তবে, এ দুটি বিদ্যালয়ে পুরাতন ভবন টেণ্ডারের আগে লোহার দরজা, জানালা, গ্রিল, ফ্যান ও বৈদ্যুতিক তার খুলে শিক্ষা অফিসের যোগ-সাজশে আলাদা ভাবে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

উপজেলার ৫৫ জন শিক্ষকদের কাছ থেকে সমতাকরণ বকেয়া বিল তৈরি করার সময় ৫০ জন শিক্ষক থেকে ২ হাজার ৫ শত করে মোট ১লক্ষ ২৫ হাজার হাতিয়ে নেন। এদের মধ্যে ৫জন শিক্ষক টাকা না দেয়ায় তাদের বিল তৈরি না করে পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতি নেতাদের হস্তক্ষেপে ১৫দিন পরে তাদের বিল পাশ করা হয়। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মানোন্নয়নের জন্য দুই ধাপে গত মে মাসে ৫৫টি বিদ্যালয় ও অক্টোবর মাসে বাকী ৪০টি বিদ্যালয়ের জন্য বিতরণ করা সাউন্ড সিস্টেম ও প্রজেক্টরের খরচ বাবদ প্রতি স্কুল থেকে ৪'শ টাকা হাতিয়ে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, গুটি কয়েক দূর্ণীতিগ্রস্ত  প্রধান শিক্ষক একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। সে সিন্ডিকেটের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে এই প্রাথমিক শিক্ষা অফিস শাসন চলে আসছে তিনি যোগদান করার পর থেকে। এই অফিসের কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই সিন্ডিকেটের বাইরে এসে কাজ করতে পারে না। কারণ এই সিন্ডিকেটের বাইরে এলে তারা অর্থ পাবে না। বদলী বাণিজ্য, স্লীপের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি, ওয়াশ ব্লকের বরাদ্দ, পুরাতন ভবন নিলামের টাকা, সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা বর্তমানে এই অফিসের রেওয়াজ হয়ে দাড়িয়েছে। আবার কিছু শিক্ষক টাকার বিনিময়ে কোচিং বাণিজ্য  করার সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যালয়ে ইচ্ছামত আসছে-যাচ্ছে। যা শিক্ষা কর্মকর্তা জেনেও না জানার অভিনয় করেন।

উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষা অফিসের দুর্নীতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। এমন কোন খাত নাই যে খাতে তিনি টাকা নিচ্ছেন না। একটি শিক্ষক সিন্ডিকেটকে কাজে লাগিয়ে তিনি এইসব দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।  উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পূর্ব চন্দনাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, তার কাছ থেকে তাঁর জিপিএফ হতে ঋণ নেয়ার সময় ১ হাজার টাকা নিয়েছেন ।

এছাড়া চলতি বছর ১৮ মে ও ২৩ অক্টোবর দুই দফায় ৯১টি সরকারি স্কুলে প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম ও প্রজেক্টরের স্ক্রীন বিতরণের জন‍্য ৪/৫শত টাকা করে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানিয়েছেন। এ টাকা নেয়ার ব‍্যাপারে শিক্ষা অফিসের ক্লার্ক প্রশান্ত টাকা নেওয়ার স্বীকার করে বলেন টাকা প্রধান শিক্ষক হাবিবুল্লা কালেকশন করেন বলে শুনেছি অপরদিকে হাবিবউল্লাহ বলেন প্রশান্ত বাবুই টাকা আদায় করে থাকে। 

এ বিষয়ে একমাত্র উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইলিয়াছের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা কমিটিতে তাঁর থাকার কথা থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁর সাথে পরীক্ষা আয়োজন, প্রশ্ন প্রণয়ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন না বরং পরীক্ষাসংক্রান্ত কাগজে স্বাক্ষর নেন। আর পরীক্ষার আয়-ব্যয় বিষয়ে শুধুমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। আমি কিছুই জানিনা। এ সব বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.কবির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এইসব বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। মডেল টেস্ট বিষয়ে তিনি বলেন এইসব ফি পরীক্ষার সরঞ্জামের জন্য নেয়া হয়েছে এবং তাঁর আগের শিক্ষা কর্মকর্তার বানানো কমিটি দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন। পূর্বের শিক্ষা কর্মকর্তা যেভাবে চালিয়ে গিয়েছেন আমি আসার পরও সেভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুর রহমান  জানান,  এ ধরনের দূর্নীতির ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.