× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

লবণ আমদানির উদ্যোগ: অনিশ্চয়তায় কক্সবাজারের চাষিরা

মো. কামাল উদ্দিন, চকরিয়া (কক্সবাজার)

১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৩ পিএম

দেশের সিংহভাগ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজারে। কিন্তু, নতুন মৌসুমের শুরুতেই আবারও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির উদ্যোগ নেওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। মাঠে এখনও পড়ে আছে গত মৌসুমের চার লাখ টনের বেশি লবণ। তার মধ্যেই শিল্প মন্ত্রণালয়ে দেড় লাখ টন সোডিয়াম সালফেট লবণ আমদানির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর বিপুল বিনিয়োগ করা চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় মাঠে নামতে দোদুল্যমান।

কক্সবাজার বিসিকের তথ্যমতে, দেশের মোট লবণের ৮৭ শতাংশ উৎপাদন হয় কক্সবাজারের সাত উপজেলায়। কিন্তু নতুন মৌসুম নভেম্বরে শুরু হলেও চকরিয়া, বদরখালী, ঢেমুশিয়া, রামপুর, পশ্চিম বড়ভেওলা, দরবেশকাটা ও খুটাখালী এলাকার বড় অংশে মাঠ এখনও খালি।

চকরিয়া মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কক্সবাজার লবণ চাষি-ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী বলেন, গত মৌসুমের চার লাখ টনের বেশি লবণ এখনও মাঠে অবিক্রীত। এর ওপর সরকার নতুন করে দেড় লাখ টন আমদানির পরিকল্পনা নিচ্ছে। এতে চাষিরা আবারও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। তিনি জানান, উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেও চাষে নামলেই লোকসানের আশঙ্কায় অনেকে মাঠে কাজ শুরু করেননি।

বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বার্ষিক লবণের চাহিদা ২৬.১০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু, গত মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয়েছে ২২.৫১ লাখ মেট্রিক টন ও এর আগের মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ২৪.৩৭ লাখ মেট্রিক টন। মৌসুম শেষে অবিক্রীত লবণ থেকে গেছে ৪ লাখ ২০৩ টন। চাহিদা ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও বিপুল পরিমাণ লবণ বিক্রি না হওয়াকে ‘বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা’ বলে দাবি করছেন স্থানীয় চাষিরা।

এদিকে, সমুদ্র উপকূলীয় কুতুবদিয়ায় ইতোমধ্যে চাষ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদকর্মীরা জানান, চাষিরা বলছেন- এ বছর লাগিয়ত (ভাড়া), সেচ ব্যয় ও শ্রমিক মজুরি বেড়েছে। কিন্তু মৌসুম শুরুর আগেই আমদানির প্রস্তাব বাজারে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে।

চকরিয়ার দরবেশকাটা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাওলানা শহিদুল ইসলাম বলেন, এখন বাজারে এক মণ লবণ ২০০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে উৎপাদন খরচই ৩০০ টাকার বেশি। পরপর কয়েক বছর লোকসান হলে লবণ শিল্প টিকবে না।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক (লবণ সেল) সরোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান মজুত লবণ দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা পূরণ সম্ভব। এরপর কোনো সংকট যাতে না হয়, সেজন্য দেড় লাখ টন লবণ আমদানির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে ভারত ও পাকিস্তান থেকে অপরিশোধিত লবণ আমদানি করা হবে।

কক্সবাজার লবণ চাষি-ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও মাতামুহুরী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়াইবুল ইসলাম সবুজ অভিযোগ করেন, শিল্প-কারখানার স্বার্থে মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশে প্রতি বছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পথ খোলা রাখা হয়। ফলে দেশীয় উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য পান না। তার দাবি- লবণ চাষিদের টিকে থাকতে হলে সরকারকে জমির ভাড়া, সেচ সুবিধা ও শ্রমিক খরচে সহায়তা দিতে হবে এবং সরকারি কেনাকাটা বাড়াতে হবে।

কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন- লবণের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারিভাবে চাষিদের কাছ থেকে লবণ কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নতুন করে গুদাম সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, মুক্তবাজার ব্যবস্থায় দাম নির্ধারণ করা যায় না। ফলে বাজারে দাম কমলে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, এটাই বাস্তবতা।

প্রান্তিক চাষিদের ভাষ্যমতে- লাগিয়ত, শ্রমিক, সেচ ব্যয় বৃদ্ধি ও বারবার আমদানির প্রভাব মিলিয়ে লবণ চাষ এখন লোকসানের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে লবণ চাষ ছেড়ে দিতে হবে। দেশের লবণ শিল্পও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হবে।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.