কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় বহুতল ভবনের নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। একেরপর এক অপরিকল্পিত ভবণ নির্মাণের কাজ চলছে। কেউ পৌরসভা, কেউ জেলা প্রশাসক কেউ উন্নয়ন কতৃপক্ষের নিম্ন শ্রেণির কর্মচারীর সাথে গোপনে অবৈধভাবে ছাড়পত্র নিয়ে শতাধিক ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। যদিওবা কক্সবাজারকে পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়ে তোলার কথা। সেখানে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করে পরিবেশ এবং ইসিএ আইন লঙ্ঘনের মতো কান্ড ঘটিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষ (কউক)।
শহরের কলাতলি লাইট হাউস, সৈকত পাড়া, মেরিন ড্রাইভ সড়ক , ডলফিন মোড় হয়ে ভাঙ্গার মোড় পর্যন্ত এবং পুরো পৌরসভার এলাকা জুড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। যা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের চোখে কালো চশমা পড়ে নিরবে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর মতো অবস্থা। আর এসব ভবনে গিয়ে দেখা যায় যে, কেউ রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়ে,কেউ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীর প্রভাবে, আবার কেউ উন্নয়ন কতৃপক্ষের সাথে হাত করে তাদের নিজস্ব টুকেন নিয়ে কাজ করছেন। যদিওবা ভবন নির্মাণকারী মালিক পক্ষ এসব কাউকে দেখাতে চান না। এসব অনুমতি পত্রগুলো মোবাইলেও ছবি তুলতে দেয় না ভবণ নির্মাণকারী কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার।
জানা যায় যে, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার রিশাদুন নবী এবং কউক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন এবং নিয়োজিত সচিব (সিনিয়র সহকারী সচিব), উপপরিচালক (প্রশাসন) (অ.দা.), উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) (অ.দা.) সানজিদা বেগমকে ম্যানেজ করার নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। তবে এসব বিষয় আদৌ কউকের এসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি গোচরের মতো কান্ড। প্রতিটি ভবনে গেলেই অকপটে রিশাদুন নবীর কথা বলে ভবন নির্মাণকারী মালিক কতৃপক্ষ থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়াররা। কেয়ারটেকাররাও কউকের অথরাইজড অফিসার রিশাদুন নবীর কথা বলেন। কলাতলির ডলফিন মোড় এলাকার নতুন সিক্স সিজন নামের ভবন নির্মাণকারী চট্রগ্রামের সাখাওয়াত বলেন, আমরা পৌরসভার অনুমতি নিয়েছি অনেক আগে, কউক আমাদের অনেক পরে আসছে, আমরা সবকিছু ঠিক করে কাজ করতেছি। আমি চট্টগ্রাম থেকে আসলে আপনাদের বসে কথা বলবেন, মোবাইলে কোন বক্তব্য দিতে পারবনা। একইভাবে তার পূর্ব পাশে মিরসরাই এলাকার আরেক ভবন নির্মাণকারী বলেন, আমরা আপনাদের সাথে যোগাযোগ করব, আপনার সবাই সহযোগিতা করুন। আমরাও আপনাদেরকে সহযোগিতা করব। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ ছিল, পৌরসভা এবং উন্নয়ন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে কাজ করতেছি। তারা আমাদেরকে লিখিত কিছু দেয়নি, তবে কাজ করতে বলেছেন।
এদিকে কলাতলি স্যুাট সাদাফের পাশে সোহেল নামের একজন দীর্ঘ তের বছর বন্ধ থাকার পর এগারো তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ করে কমপ্লিট করছে,যা রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতার বলপূর্বক করা হয়েছে। কউক এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোন ছাড়পত্র না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ভবনটি নির্মান করেছে। একইপাশে কাজ চলছে দশতলা বিশিষ্ট ফাউন্ডেশন নির্মাণের, বিএনপি নেতার ভাই পাখির। নানা কৌশলে প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের ব্যববহার করে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য জোরালো তদবির চালান। যদিওবা কউক কতৃপক্ষের রিশাদুন নবীর নামে কাজ চালানো হচ্ছে।
কলাতলি সৈকত পাড়া গণপূর্ত মাঠ সংলগ্ন হোটেল লেগুনা বীচের পূর্বপাশে মহেশখালীর শীর্ষ জলদস্যু গফুরের একটা বহুতল ভবনে কউকের অভিযানে ভাঙ্গচুর করা হয়। এরপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উন্নয়ন কতৃপক্ষের গোপন ইশারায় পুরো ভবনটি সম্পন্ন করেছে। এ নিয়ে জনমনে নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিয়েছে।
সৈকত পাড়া এলাকায় জামায়াত বিএনপি এবং স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে ভবন নির্মাণের নতুন কাজ।যা দশতলা বিশিষ্ট একটি বহুতল ভবনের নকশা তৈরি করেছেন । স্থানীয় দলিল লেখক মহসিন নামের এক লোক উন্নয়ন কতৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার রিশাদুন নবীর একটি অবৈধ অনুমতি পত্র নিয়ে ভবনটির নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন। আদৌও কী রিশাদুন নবী এই অনুমতি পত্র দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত চাপাচাপি না করতেও অনুরোধ করছে জমির মালিক মহসিন। এছাড়াও শহরের আনাচকানাচে যত্রতত্র স্থানে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। দুর্নীতিবাজদের যোগসাজশে এসবের বিরুদ্ধে নিরব ভুমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল বলেন, ক্ষমতার রদবদল হওয়ার পর থেকেই যে যার মতো করে অনুমোদন বিহীন ইসিএ এলাকাসহ সরকারি খাসজমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেই চলছে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের উদাসীনতায় এবং যোগসাজশে এসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নের ধস নামবে। উন্নয়ন কতৃপক্ষ মানেই পরিকল্পিত উন্নয়ন করা। সেখানে এমন কান্ডে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব ভবনের বিরুদ্ধে অচীরেই অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন।
এদিকে কউক সচিব, সানজিদা বেগম এবং অথরাইজড অফিসার রিশাদুন নবীর নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে বড়বড় নির্মাণাধীন ভবন গুড়িয়ে দিলেও পরর্বতীতে এসব ভবনগুলো একচেটিয়াভাবে পুনরায় নির্মাণ হয়ে যাওয়াতেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তবে অনেকেই এসব বিষয় নিয়ে বলছেন কউক ম্যানেজ করেই সব ঠিকঠাক হয়েছে। যদি কউক ম্যানেজ না করলেই গুড়িয়ে দেওয়া হয় বৈধ-অবৈধ ভবন। এ নিয়ে উন্নয়ন কতৃপক্ষ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ছে।
শতশত অভিযোগের বিষয়ে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার রিশাদুন নবীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে পারবনা। আমি কাউকে অনুমতি দিইনি, আর আপনি আমার অনুমতি ছাড়া কোন বক্তব্য লিখতে পারবেন না। আমরা বারোশতের মতো অনুমতি দিয়েছি, তবে সেগুলো জায়গার কাগজপত্র এবং স্থান বুঝে দেওয়া হয়েছে।
উপ পরিচালক সচিব (সিনিয়র সহকারী সচিব), সানজিদা বেগম বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে পারবনা। তবে আমরা যা করি তা আমাদের চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে করি। আপনি রিশাদুন নবীর বিষয়টি আমাকে বলছেন সেটি আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি চেয়ারম্যান সাহেব থেকে বক্তব্য নিলে ভালো হয়। আমাদের বক্তব্য দেয়া নিষেধ আছে।
উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, বক্তব্য নিলে ইন্জিনিয়ারের কাছ থেকে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
