× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

চট্টগ্রামের শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট

শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউটে অনিয়মের অভিযোগ, দুদকে চিঠি

এম.তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ

১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৪০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হলেও প্রায় এক দশক ধরে কয়েকজন শিক্ষকের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। নিয়ম না মেনে বিভিন্ন খাতে বিপুল অর্থ ব্যয়, আয়কর ফাঁকি, প্রশ্নপত্র প্রুফ ও মডারেশন খাতে অস্বচ্ছ ব্যয়সহ একাধিক অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি এসব অনিয়মের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে।

২০২৫ সালের ১২ নভেম্বর দুদকে জমা দেওয়া ওই অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু সোলেমান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরুল আল আমিনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের নানা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

দরপত্র ছাড়াই কোটি টাকার কাজ

অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পর্যন্ত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দরপত্র ছাড়াই বিদ্যালয়ের ভবনের ৪র্থ ও ৫ম তলার নির্মাণ ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়। এসব কাজে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয় দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে। ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এসব ব্যয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন বা নিরীক্ষা রেকর্ড নেই।

ট্রাস্ট পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে আগে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিনিধিদের নির্বাচন করা হলেও ২০২৪-২৬ মেয়াদে প্রধান শিক্ষক নিজ পছন্দের সদস্যদের তালিকা তৈরি করে সভাপতির অনুমোদন নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে শিক্ষক–অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

২০২৪ সাল থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় ‘প্রশ্নপত্র প্রুফ ও মডারেশন’ খাতে প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে উত্তোলন করা হচ্ছে। পরীক্ষার খাতায় ‘কোডিং’ নামে ভাউচার তৈরি করে এই অর্থ তোলা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাদের নামে বড় অঙ্কের ভাউচার তৈরি করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষা, শিক্ষা সফর ও বিদায় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হলেও এসব টাকা প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা হয়নি। কিছু শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত উদ্দেশ্যে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

২০১৫ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই একাধিক চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ২০২২ সালে তাঁদের স্থায়ী করা হয়। ওই তালিকায় রয়েছেন রাহিমা খানম (দিবা শাখা), অহিদুল্লাহ (প্রাতঃশাখা), রওশন আক্তার ও আশরাফ আলী। কারও নিয়োগ বা যোগদানপত্র নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রধান শিক্ষক দুই শিফট থেকে বছরে প্রায় ১৭ লাখ টাকা আয় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু তিনি এসব আয়ের কোনো কর পরিশোধ করেননি। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঘরভাড়া ৩ হাজার ও নন-এমপিও শিক্ষকদের ৪ হাজার টাকা হলেও প্রধান শিক্ষক উভয় শিফট থেকে ১৬ হাজার টাকা করে ঘরভাড়া নেন। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ‘বিশেষ ভাতা’ হিসেবে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।

২০১৬ সাল থেকে অনুমোদন ছাড়া প্রতি বছর টিউশন ফি বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাসিক ফি এক হাজার টাকা, যা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদনবিহীন। অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক আবু সোলেমান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কোনো সরকারি বরাদ্দের আবেদন করেননি; বরং নিজ আস্থাভাজন ব্যক্তিদের নিয়ে উন্নয়ন কমিটি গঠন করে বিভিন্ন খাতে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান রোডে অবস্থিত শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম চিন্তাবিদ শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর নামে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়। ১৯৯৩ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে দুই শিফটে অন্তত ৫০ জন শিক্ষক পাঠদান করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী জানান, বিভিন্ন নির্মাণকাজের ব্যয় সংক্রান্ত ভাউচারে তাঁদের জোর করে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নাকি তাঁদের বলেছেন, ‘এটা চাকরিরই অংশ; স্বাক্ষর না করলে চাকরি থাকবে না।’ তাদের অভিযোগ, একসময় সুনাম থাকা এ প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের কারণে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জায়গায় পরিণত করা হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবু সোলেমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তী সময়ে পাঠানো ক্ষুদে বার্তারও কোনো জবাব মেলেনি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও শাহ ওয়ালীউল্লাহ ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামের সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, ‘আমি এখন দায়িত্বে নেই। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’ তবে নথিপত্রে দেখা যায়, গত ২ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের ব্যয়ের হিসাব খাতায় তার স্বাক্ষর রয়েছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.