রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-ভোলাহাট-গোমস্তাপুর) সংসদীয় আসনে ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাবেক সাংসদ আমিনুল ইসলাম।
এদিকে আমিনুল ইসলামকে বিতর্কিত মুখ ও চাপিয়ে দেয়া প্রার্থী আখ্যা দিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিতে নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, রেলপথ অবরোধ, প্রতিবাদ সভা ইত্যাদি কর্মসুচি অব্যাহত রেখেছেন। তারা বলেন, নেতাকর্মীদের মতামত, প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও ভোটারদের মানসিকতা বিবেচনা না করেই বিতর্কিত আমিনুল ইসলামকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তারা দ্রুত প্রার্থী পরিবর্তন করে ভোটারদের মানসিকতা ও নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন প্রার্থী দেয়ার দাবি করেছেন। তা না হলে বিএনপির একাংশ আমিনুলকে বয়কট ও তাকে ঠেকাতে স্বপক্ষ ত্যাগ করবে। এছাড়াও ইতিমধ্যে এই আসনের নারী ভোটারগণ আমিনুলকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর বিভিন্ন আসনে অস্থিরতা সৃষ্টি হলেও আন্দোলন তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে। আমিনুল ইসলাম বিএনপির সঙ্গে জড়িত থাকলেও, বিগত ১৫ বছর তার প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকা ও এমপি থাকার সময়ে নানামুখী বির্তিকত কর্মকান্ডের কারণে দলের একটি অংশ তাকে মেনে নিতেই নারাজ। এক্ষেত্রে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসন (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দলীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় নেতা কর্মীরা। বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে প্রার্থী পরির্তনের দাবি জানানো হচ্ছে বারংবার। তাদের দাবি তারা ত্যাগী প্রার্থী চান।
অন্যদিকে ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরে আসলে নাচোল-ভোলাহাট-গোমস্তাপুরের অজস্র নেতাকর্মী ও সমর্থক নারী নেত্রী মাসউদা আফরোজ হক শুচিকে এমপি হিসেবে দেখতে চান বলে স্লোগান দিতে থাকেন। নাচোল পৌর বিএনপির এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, আমাদের রক্ত, ঘাম, অশ্রু মিশে আছে এই মাটিতে। সেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে কাউকে মনোনয়ন দেয়া মানে আমাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবজ্ঞা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যবেক্ষন করে দেখুক স্থানীয় রাজনীতিতে কার অবদান বেশী ও কে বেশী জনপ্রিয় শুচি না আমিনুল।
তিনি বলেন, আমিনুল কখনই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন না এমনকি পাশেও ছিলেন না। তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেয়াটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটা কেন্দ্রের বিবেচনা করা উচিৎ। এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি নেতা জেলা মহিলা দলের সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক শুচিকে তারা স্থানীয়ভাবে এমপি হিসেবে দেখতে চান।
অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা,র্যালী ও বিক্ষোভ শেষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপণ আঁতাত থাকা আমিনুল ইসলামকে সুবিধাবাদী নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বক্তাগণ বলেন আওয়ামী লীগের এমন কোন নেতা নেই যার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিলোনা আমিনুল ইসলামের।
আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির বাইরে রয়েছেন এবং দলীয় কর্মসূচি বা আন্দোলনে তার উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ফলে নির্বাচনি এলাকায় তার জনসম্পৃক্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়াও শুচি একজন ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতা। যিনি দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন এবং আছেন সেই সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। অথচ তাকে উপেক্ষা করে এমন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে ছিলেন। জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা গুলির ভয় না পেয়ে, মামলা-হামলার ভয় না পেয়ে রাজপথে ছিলাম। এখন সেই ত্যাগের কোনো মূল্য নেই! দলের সুবিধাভোগীরা প্রার্থী হবে, আর আমরা কেবল হাততালি দেবো এটা মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা প্রার্থী হিসেবে শুচিকেই চাই।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-ভোলাহাট-গোমস্তাপুর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তৃণমুলে পচ্ছন্দের শীর্ষে রয়েছেন ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন নেতৃত্ব জেলা মহিলা দলের সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক শুচি।
কিন্ত বিগত ১৭ বছর দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সরব থেকে এবং অসহায় কারা নির্যাতিত নেতা কর্মীদের হামলা,মামলা, চিকিৎসা ও অসহায় পরিবারগুলোকে অভিভাবকের মত দেখা শোনা করেও কি কারনে বিএনপির ত্যাগী নেতা শুচি মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন সেটিই এখন দেখার বিষয়। নাচোল,ভোলাহাট,গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির একাধিক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, তারা আমিনুল ইসলামকে প্রার্থী হিসেবে ককানো কোনো অবস্থাতেই মেনো নিবেন না। তারা প্রার্থী পরিবর্তন করে শুচিকে প্রার্থী করার দাবি জানান। এবিষয়ে নাচোল উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম মজিদুল হক, সম্পাদক আবু তাহের খোকন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হবার পর এলাকার মানুষ ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি কোন যোগাযোগ রাখেননি। আন্দোলন-সংগ্রামেও তাকে কোনদিন দেখা যায়নি।
প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, আমিনুল ইসলাম ব্যতিত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যে কাউকে মানতে রাজি আছেন তারা। কারণ, (আমিনুল ইসলাম) বিগত সময়ে ফ্যাসিস্ট আাওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। কাজেই প্রার্থী পুনঃমূল্যায়নের জোর দাবি জানান তারা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
