ছবি: সংগৃহীত
বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফলাফলের আশায় দিন রাত পড়াশোনা করে নিজেকে প্রস্তুত করেছে অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সায়েমাহ্ আক্তার স্নেহা। কিন্তু তার সকল পরিশ্রম মাটি হয়েছে। আর পরীক্ষায় অংশ নেয়া হলো না। স্নেহার মতো একই পরিনতি গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ থেকে ১০জন ছাত্রীর।
অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের গাফেলতির কারনে বৃত্তি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে সদর উপজেলার বল্লমঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী। এতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রায় ১০ বছর পর বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তারা ৪-৫ মাস থেকে পরীক্ষার জন্য সন্তানদের প্রস্তুত করছিলেন। শ্রেণি শিক্ষক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক মেয়েদের নামও সংগ্রহ করেন। পরে জানা যায়, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশনই করেনি। ফলে মেধা যাচাইয়ের এ গুরুত্বপূর্ণ ধাপে অংশ নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো তারা।
মাহামুদা আক্তার শিল্পী নামে এক অভিভাবক ইতিমধ্যে এঘটনায় জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে একটি অভিযোগ করেছেন। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন- শিক্ষাবোর্ড থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের নাম নিবন্ধনের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে পত্র দেয়া হয়। কিন্তু তিনি বা কোন শিক্ষক কর্মচারী বিষয়টি অভিভাবকদের অবগত করেননি। এমনকি বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে বা শ্রেনীকক্ষে কোন নোটিশ দেননি। ফলে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকরা এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারেননি।
তার অভিযোগ, বিষয়টি আচ করতে পেরে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের সাথে যোগযোগ করলে তিনি তাকে জানান, শিক্ষাবোর্ডে যোগাযোগ করে তাদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু পরে আর এ ব্যাপারে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।
বিদ্যালয়ের আরেক অভিভাবক আব্দুল মালেক বলেন, শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ছিল এই বৃত্তি পরীক্ষা। কর্তৃপক্ষের গাফেলতির কারণে এই বিদ্যালয়ের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের অপূরনীয় ক্ষতির মুখে পড়তে হলো। এর দায়ভার অবশ্যই প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।
আরেক শিক্ষার্থীর মা পারভিন বেগম বলেন,আমার মেয়ে খুবই ভালো ছাত্রী সে পঞ্চম শ্রেণীতেও বৃত্তি পেয়েছে। আশা করেছিলাম এবারও বৃত্তি পাবে। কিন্তু তাদের গাফেলতির কারণে মূলত আমার মেয়েটা বৃত্তি পরীক্ষা দিতে পারলো না। তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। এমন ভূল যেন আর না হয়।
বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী জান্নাতী বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে আগে শ্রেনীকক্ষে আমাদের নোটিশ পড়ে শোনানো হতো। কিন্তু এবার তা করা হয়নি। এটি কেন করা হলো না, আমাদের জানা নেই। আমার স্বপ্ন ছিলো বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিজের মেধা যাচাই করবো। কিন্তু হেড স্যারের গাফেলতির কারনে তা আর হয়ে উঠলো না। একই অভিযোগ করেন অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মুশফিরাত, জিসা, তানসির, রোশনি, আরোবী, ইমা, রুমাইয়া।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমি অফিস সহকারীকে বলেছিলাম নোটিশ করে দেন, দেরি হয়ে গিয়ে। পরে আর দেয়া হয়নি। আমি নিজেই বোর্ডে গিয়েছিলাম এ ব্যাপারে। হঠাৎ করে আসছে তো সেজন্য কাজ টা হয়নি।
তিনি আরো জানান, এবিষয়ে অভিভাবকের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ করার বিষয়টি জেনেছি। সময় মতো জবাব দেব সেখানেই।
কথা হয় বিদ্যালয়ের সভাপতি আঃ সালাম শেখের সঙ্গে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম তিনি ভুল স্বীকার করে বল্লেন আমি নিজেও বোর্ড গিয়েছিলাম যোগাযোগ করেছি। মূলত সে সময় পূজার বন্ধ ছিল, তাছাড়া ৮ম শ্রেনির রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে ব্যস্ত ছিল নাকি তারা। তাছাড়া তো ফোন দিয়েও অভিভাবকদের বলা যেতে কিন্তু তারা এটিও করে নাই।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান বলেন, ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক মাহমুদা আক্তার শিল্পী এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি আমি তদন্তে করে দেখবো। আসলে কি ঘটনা ঘটেছে, দেখার পরই বলা যাবে কোনটা সত্য।
দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রেজাউল করীম চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার সাথে যোগাযোগ করেননি। গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় ছিলো। এখন আর নিবন্ধনের কোন সুযোগ নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
