ছবি: সংগৃহীত
ঝিনাইদহ শহরের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়কে আজাদ রেস্ট হাউজের বিপরীতে গড়ে ওঠা প্যারামাউন্ট ক্যাডেট একাডেমি শহরের সবচেয়ে আলোচিত কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। সাম্প্রতিক সময় প্রতিষ্ঠানটি শহরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড়, চৌরাস্তায় ঝুলিয়েছে রঙ-বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন। সেখানে বড় করে লেখা ২০২৫ ক্যাডেট লিখিত পরীক্ষায় ৪৭ জনের সাফল্য।
সংখ্যাটি অস্বাভাবিকভাবে বেশি হওয়ায় সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে নেমে শুরু হয় তথ্য যাচাই। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্যারামাউন্ট একাডেমির প্রদর্শিত তালিকার ৪৭ জনের মধ্যে ক্যাডেট কলেজে প্রকৃত চান্স পেয়েছে মাত্র ২০ জন আর বাকী ২৭ জনই মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল খুলনা (এমসিএসকে) এর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। মূলত এই ২৭ জনের ক্যাডেট কলেজের সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্কই নেই, তবুও ব্যানারে একত্রে দেখানো হয়েছে ৪৭ জন ক্যাডেট সফলতা হিসেবে। একাধিক অভিভাবকদের দাবি মূলত ফলাফল বাড়িয়ে টাকা হাতানোর কৌশল।
সালমা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, ৪৭ জন ক্যাডেট পাস এটা দেখেই ছেলেকে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিই। পরে জানতে পারলাম ২৭ জন তো ক্যাডেট কলেজেরই নয়। ক্যাডেট আর (এমসিএসকে) যে আলাদা বিষয়, সেটা তো ব্যানারে একবারও বলা হয়নি। আমাদের সাথে সরাসরি প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এমসিএসকে তে ভর্তিপ্রাপ্তদের ক্যাডেট কলেজে চান্স দেখানো মূলত একটি পরিকল্পিত বিভ্রান্তি ও প্রতারণা।
মিজানুর রহমান নামের এক অভিভাবক জানান, “ক্যাডেট কলেজ আর এমসিএসকে-এর পার্থক্য আমরা অনেকেই জানতাম না। কোচিং সেটাই সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। এটা প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।” রোকসানা আক্তার নামের এক শিক্ষিকা বলেন, “ফলাফল আলাদা করে উল্লেখ না করা মানে ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি। আমাদের বাচ্চাদের স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা করা। তিনি জানান, কেন প্রশাসন এ ধরনের ভুল তথ্যের বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণ করে না?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক অভিভাবক বলেন, ক্যাডেট কলেজে প্রকৃত ভর্তির সংখ্যা মাত্র ২০ জন থাকলে অভিভাবকদের আগ্রহ কমে যেতে পারে। তাই এর সঙ্গে এমসিএসকে খুলনার ২৭ জনকে যুক্ত করে ‘বড় সংখ্যা’ তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “ক্যাডেট কলেজ ও এমসিএসকে দুই প্রতিষ্ঠানের মান ও পরীক্ষার ধরন আকাশ-পাতাল। এগুলো এক করা মানে ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার।” তবে এ সকল অভিযোগ প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করলেও প্রমাণ দেখানোর পর নীরব হয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক নাজমুল হোসেন এমদাদ। দীর্ঘ নীরবতার পর তিনি বলেন, ৪৭ জনের মধ্যে (এমসিএসকে) এর শিক্ষার্থীরাও আছে। আমরা মোট সাফল্য বোঝাতে একসাথে দেখিয়েছি। কিন্তু ব্যানারে আলাদা করে উল্লেখ করা উচিত ছিলএটা আমাদের ভুল।
এ ব্যাপারে প্যারামাউন্ট ক্যাডেট একাডেমির পরিচালক আয়াতুল্লাহ আল গালিবের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক মো: মোজাফফর হোসেন জানান, ক্যাডেট কলেজ ভর্তি ফলাফলের সঙ্গে এমসিএসকে এর ফলাফল এক করে দেখানো সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বিভ্রান্তিকর। যদি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোচিং সেন্টার ইচ্ছাকৃতভাবে ভ্রান্ত, অসত্য কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অভিভাবকদের আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয় তবে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝিনাইদহ শহরজুড়ে এখন আলোচনা কোচিং সেন্টারগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বড় সংখ্যা দেখিয়ে প্রতারণার ব্যবসা করছে। অভিভাবকদের অজ্ঞতাই তাদের হাতিয়ার। শিশুর ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন এবং পরিবারের কষ্টার্জিত অর্থ সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মিথ্যা বিজ্ঞাপন ও অস্বচ্ছ তথ্যের কারণে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
