নড়াইলের লোহাগড়া থানায় একটি হামলার মামলায় সত্য ঘটনা অনুযায়ী তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে মামলা রেকর্ড করার পর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শরিফুল ইসলামকে ইস্টার্ন রিলিজ (প্রত্যাহার) করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো উপজেলায় চলছে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ।
ব্যাংক কর্মকর্তার ওপর হামলা- সূত্রপাত এখানেই
গত ১৪ নভেম্বর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর লোহাগড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপাশা এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রিফাত উদ্দিন মনির (৫৭) নামে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
আহত রিফাত উদ্দিন মনির অভিযোগ করেন -
“জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশী সরদার নাহিদ নেওয়াজ সবুজ ও তার বড় ভাই সর্দার তৌহিদের ছেলে নওশাদ অতর্কিত আমার ওপর হামলা চালায়।”
অভিযুক্ত নাহিদ নেওয়াজ সবুজ পাল্টা দাবি করেন
“মনি শেখ প্রথমে আমাকে ইট দিয়ে আঘাত করেন। আমি আত্মরক্ষায় পালটা আঘাত করেছি।” এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ ও তদন্তের ভিত্তিতে মামলা নেন ওসি।
ঘটনার পর আহত ব্যাংক কর্মকর্তা থানায় মামলা দিলে ওসি মো. শরিফুল ইসলাম ভিডিও ফুটেজ ও পরিদর্শনের মাধ্যমে ঘটনাটি যাচাই বাছায় ও তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করেন।
এ বিষয়ে কথা হলে ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন -
“ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ যাচাই করেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবেশী ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্তে অসঙ্গতি পাইনি—তাই আইন অনুযায়ী মামলা নিয়েছি। এর পরেই আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে ইস্টার্ন রিলিজ করেছে। রিলিজ চিঠিতেও ‘মামলাটিতে অনিয়ম’ উল্লেখ করা হয়েছে। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।”
মামলা নেওয়ার পরই ওসি বদলি -প্রশ্নের মুখে প্রশাসন
মামলা রেকর্ড করার পরপরই তাকে লোহাগড়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এই সিদ্ধান্তকে “দুর্বৃত্ত ও প্রভাবশালীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার” বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবির ভাষায় -
“সত্য ঘটনা অনুযায়ী মামলা নেওয়াতেই ওসিকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখছেন -
“ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো অফিসাররাই যদি বদলি হন, তাহলে জনগণ ন্যায়বিচার কোথায় পাবে?” তারা আরও বলেন, বিগত ছয় মাস আগে লোহাগড়ার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে অবনতি ছিল সেটা ওসি শরিফুল আসার পরে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে, এবং লোহাগড়ায় যে পরিমাণে গ্রাম্য কোন্দল কাইজ্জা, দাঙ্গা, মার্ডার হতো, ওসি শরিফুল আসার পর থেকে সেই ব্যাপারগুলো অনেকটাই কমে গিয়েছিল। অথচ ন্যায়ের পক্ষে থেকেও সেই মানুষটাকেই প্রত্যাহার করা হলো এটা খুবই দুঃখজনক।
এক বছরে তিন ওসি বদলি - ব্যাহত থানা প্রশাসন
গত এক বছরে লোহাগড়া থানায় তিনজন ওসি বদলি হওয়ায় জনমনে অসন্তুষ্টি বাড়ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, “একজন ওসিকে এলাকা, মানুষ, অপরাধচক্র - সব বুঝতে দুই–তিন মাস সময় লাগে। তার আগেই যদি তাদের বদলি করা হয়, তাহলে থানা প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়াই স্বাভাবিক।”
প্রশাসনের নীরবতা ও বাড়তি সন্দেহ
ওসি শরিফুল ইসলামের প্রত্যাহার বিষয়ে প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপার অফিস নীরব থাকায় স্থানীয়দের সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।
একটি স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের সভাপতি বলেন, “যদি ন্যায় অনুযায়ী কাজ করলেই কর্মকর্তাদের বদলি হয়, তাহলে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা তো আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।”
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা
লোহাগড়ার সাধারণ মানুষ একটি স্বাধীন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা-
“সত্যের পক্ষে থাকা কর্মকর্তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে নেওয়া হোক।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তি বলেন ওসি শরিফুল ইসলাম লোহাগড়া থানায় যোগদানের পর লোহাগড়ার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তার স্টান্ডরিলিজ অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত দুঃখজনক।’’
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
