দেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা ‘তাজরীন ট্র্যাজেডি’র আজ ১৩তম বার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের আটতলা ভবনে লাগা আগুনে পুড়ে মারা যান ১১৭ জন গার্মেন্টস শ্রমিক। আহত হন দুই শতাধিক। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকাল থেকে পরিত্যক্ত তাজরীন ভবনের সামনে জড়ো হন নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্য, আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও দায়ী মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। আহত ও নিহত পরিবারের পূর্ণ পুনর্বাসন ও এককালীন যথাযথ ক্ষতিপূরণও এখনো মেলেনি।
শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন, সরকারি পক্ষের অসহযোগিতা, সাক্ষী জটিলতা এবং মালিকপক্ষের কালক্ষেপণের কারণে হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রায় থমকে আছে। গত দুই ডজনের বেশি তারিখে মালিক দেলোয়ার হোসেন আদালতে হাজির হননি, কিন্তু আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেনি। বরং তার আইনজীবী বারবার সময় চেয়ে মামলাকে দীর্ঘসূত্র করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ্ব কামরুল হাসান সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এখনো কেঁপে ওঠেন। তিনি বলেন, “১৫ বছর ধরে এখানে থাকি। এত বড় দুর্ঘটনা জীবনে দেখিনি। মানুষ বাঁচার জন্য রডের ওপর, দেয়ালে লাফিয়ে পড়েছে। কান্না-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ সারা রাত ধরে চলছিল। আমার ঘরও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।”
দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মোমবাতি প্রজ্বলন, কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রতিবাদ সমাবেশ। শ্রমিক সংগঠনগুলো ঘোষণা দিয়েছে, বিচার ও পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাজরীন ফ্যাশনসের নিচতলায় গোডাউনে বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, জরুরি সিঁড়ি তালাবদ্ধ থাকা এবং গ্রিলযুক্ত জানালার কারণে শ্রমিকরা আটকে পড়েন। এই দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে বাংলাদেশের পোশাক খাতে কর্মপরিবেশ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাজরীনের শ্রমিকদের জন্য এখনো ন্যায়বিচার আসেনি।