রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় কৃষি খাতে এক অনন্য রূপান্তরের গল্প লেখা হচ্ছে। পাহাড়ি জনপদের শত শত কৃষকের জীবনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে ঝুলন্ত লাউ চাষ। বাঁশের মাচায় সারি সারি ঝুলে থাকা সবুজ লাউ শুধু প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যই ছড়াচ্ছে না একসময়ের উপেক্ষিত কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থায়ও এনেছে চমকপ্রদ পরিবর্তন।
একসময় ধান ও সীমিত শাকসবজি চাষে নির্ভরশীল কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন ঝুলন্ত লাউ চাষের দিকে। কম খরচে বেশি ফলন এই দুই সুবিধাই দ্রুত জনপ্রিয় করে তুলছে এ কৃষি পদ্ধতিকে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও ঢাকার পাইকারি বাজারেও লংগদুর লাউ সরবরাহ করা হচ্ছে নিয়মিত। ফলে কৃষকেরা যেমন পাচ্ছেন ন্যায্যমূল্য, তেমনি নিশ্চিত হচ্ছে স্থায়ী আয়।
মাইনীমুখ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল কাদের জানান, ধানচাষে লোকসানের পর লাউ চাষই হয়ে উঠেছে তার পরিবারের ভরসা। একটি মৌসুমেই তিনি বিক্রি করেছেন প্রায় ৩৫ হাজার টাকার লাউ। বগাচত্বর গ্রামের কৃষাণী রহিমা খাতুনের গল্পও একইরকম। গৃহস্থালি কাজ সামলে লাউ চাষ করে তিনি এখন সন্তানদের পড়াশোনার খরচ নির্বিঘ্নে চালাতে পারছেন।
কেশব চাকমা জানান, ধান বা প্রচলিত শাকসবজির তুলনায় লাউ চাষ তাকে দিয়েছে বাড়তি সুরক্ষা। আগে মৌসুম শেষে হাতে টাকা থাকত না, এখন লাউ চাষের কারণেই প্রতি বছর কিছু সঞ্চয় করতে পারছি বল্লেন তিনি।
লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়াসিফ রহমান জানান, ঝুলন্ত লাউ চাষে প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় সম্ভব হচ্ছে,যা পাহাড়ি কৃষকদের জন্য একটি বড় সুযোগ। তিনি বলেন,জমি কম হলেও ফলন বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতি দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। রোগবালাই কম হওয়ায় কীটনাশকের ব্যবহারও কম, ফলে ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ সবজি।
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণ, বীজ ও উপকরণ সহায়তা পেলে লংগদুর কৃষি সম্ভাবনা জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গেও আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত হতে পারে। তাদের প্রত্যাশা পাহাড়ি অঞ্চলেও কৃষি হতে পারে টেকসই সমৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি।
ঝুলন্ত লাউ চাষের এ সাফল্য শুধু লংগদুর কৃষকদের স্বাবলম্বী করছে না বরং ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে সমগ্র পাহাড়ি কৃষি অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চিত্র।