× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রকৃতি ধ্বংস করে চলছে ব্যবসা

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান

২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১৮ পিএম

নগরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির কোলে অবস্থিত মিরিঞ্জা ভ্যালি দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। যে অঞ্চলের সৌন্দর্য একসময় স্থানীয়দের গর্ব ছিল, সেটি এখন পরিণত হয়েছে একদল লোভী বাণিজ্যিক চক্রের লুটতরাজের মাঠে। ব্যাঙের ছাতা অঞ্চলে এখন যা চলছে, তাকে উন্নয়ন নয়- প্রকৃতি ধ্বংসের প্রকাশ্য উৎসব বলা যায়। এমন চিত্র দেখা মিলেছে বান্দরবানে লামা উপজেলার মিরিঞ্জা পাহাড় এলাকায়।

মিরিঞ্জা পাহাড়ে ঘেষে নির্মাণ করা প্রায় ৮৯টি অবৈধ কটেজ ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে পাহাড়-বন কেটে। অবৈধ রিসোর্ট নির্মাণের নামে পাহাড় কাটা, বন ধ্বংস, প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট - সবই চলছে প্রকাশ্যে, দিবালোকে। আর প্রশাসন? রহস্যজনক নীরবতা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি অনুমোদন ছাড়াই পাহাড় কেটে এবং বনভূমির গাছ নিধন করে রিসোর্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রাতারাতি ঘর তুলতে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে প্রাকৃতিক জলাধারও। এর ফলে এলাকার জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন- এটি পরিকল্পিত পাহাড় হত্যাকাণ্ড। অল্প কিছু লোভী ব্যবসায়ী আর তাদের পৃষ্ঠপোষকরা পুরো এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। পাহাড় কেটে কটেজ বানানো হচ্ছে এমনভাবে যেন প্রকৃতি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি।

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। রিসোর্টগুলোর অধিকাংশেই নেই অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা, জরুরি চিকিৎসা সহায়তা বা প্রাথমিক সুরক্ষা সরঞ্জাম। অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘প্রকৃতির কোলে বিলাসিতা’ শিরোনামে প্রচারণা চালিয়ে দলে দলে পর্যটক টেনে নিচ্ছে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান।

আশেপাশে থাকা গ্রামের যেসব সবুজ ঘেরা বনায়ন ছিল সেগুলো দিনে দিনে এলাকা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি রক্ষা নয় - কারা যেন বরং তাড়াতাড়ি ধ্বংস করতে উদগ্রীব। সেসব রিসোর্টগুলোতে মাদকের আখড়া ধারণসহ অজানা সন্ত্রাসী তদারকি সব মিলিয়ে এই অবৈধ রিসোর্টগুলো এখন রীতিমতো নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতার ঘাঁটি। অবৈধ ৮৯ টি কটেজ উচ্ছেদ, পাহাড় পুনরুদ্ধার এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এখন জনমতের ঝড় হয়ে উঠেছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র কয়েক মাসের এই নির্মাণ জোয়ারই ব্যাঙের ছাতার দশকের ইকোসিস্টেম ধ্বংস করে দিচ্ছে। পাহাড়ের ঢালে নির্মিত দুর্বল কাঠামোতে যেকোনও সময় ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা তো দূরের কথা- এলাকাবাসীর জীবনই আজ আতঙ্কে পরিণত।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রিসোর্ট ব্যবসায়ীরাই শুধু নয় -এখানে আছে নানা স্তরের প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। যারা চাইছে ব্যাঙের ছাতাকে বাণিজ্যিক নগরীতে পরিণত করতে। তাতে প্রকৃতি মরুক, মানুষ বাঁচুক বা মরুক তাদের কিছু যায় আসে না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ব্যাঙের ছাতার পরিবেশগত ক্ষতি আর কখনও পূরণ হবে না। অবৈধ রিসোর্ট উচ্ছেদ, পাহাড়-বন পুনরুদ্ধার ও কঠোর শাস্তির দাবি আরও জোরালো হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।

লামা- চকরিয়া সড়কের মিরিঞ্জা পাহাড়ের ঘেষে পুরোটাই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে রিসোর্টগুলো। এই অনুমোদিত অনিয়ন্ত্রিত রিসোর্ট ব্যবসার ফলে একদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে বাড়ছে সামাজিক অশান্তি। বেশিরভাগ কটেজেই নেই শক্ত ভিত্তি, রিটেইনিং ওয়াল কিংবা স্থায়ী পিলার। কিছু কটেজ এমন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে সামান্য পাহাড়ধস, অতিবৃষ্টি বা প্রবল বাতাসেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ না আনলে ব্যাঙের ছাতার প্রকৃতি ও পরিবেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই অপরিবর্তনীয় ক্ষতির মুখে পড়বে।

অনুসন্ধান বলছে, যেসব অনুমোদিত রিসোর্টগুলো রয়েছে সেসব রিসোর্টে মালিকরা ম্যানেজের নামে উপজেলার লামা সাংবাদিকদের মাসিক চাঁদা দেওয়া হচ্ছে। মাস শেষে চাঁদা কালেকশনে মাঠে নামে হাতে গোনা তিন হতে চারজন সাংবাদিক। উপজেলা কিংবা জেলা পর্যায়ে যেসব গণমাধ্যম কর্মীরা আছেন তাদের নামের তালিকা করে তোলার হয় মাসিক চাঁদা। আবার কোন কোন কটেজে শেয়ার হোল্ডার হিসেবে সেই অবৈধ ব্যবসাতে জড়িয়েছেন নামধারী সাংবাদিকরা।

মিরিঞ্জা পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে মেঘবেলা নামে এক সাংবাদিক কটেজ। কটেজের স্বত্বাধিকারী পূর্বকোণে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম। তার কটেজে নাই কোন অনুমোদন। এবিষয়ে রফিকুল ইসলামকে একাধিক কল করা হলেও তিনি ফোনটি ধরেননি।

উপজেলা প্রশাসন তথ্যনুযায়ী, মিরিঞ্জা পাহাড়ের অনুমোদিত কটেজ রয়েছে প্রায় ৫৫টি। আর পুরো লামা উপজেলা মিলে প্রায় ৮৯টি রয়েছে। সেসব কটেজে মিরিঞ্জা ভ্যালী অনুমোদন রয়েছে বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে থাকলেও অধিংকাশ কটেজের মালিক অনুমোদন নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লামা -চকরিয়া সড়কে মিরিঞ্জা পাহাড়ে শিড়া উপর দিয়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রিসোর্ট। গহীন অরণ্যে কাঠ, বাঁশ, টিন কিংবা ছনসহ অন্যান্য হালকা নির্মাণসামগ্রী দিয়ে গড়েছে। যতদুর চোখ যাচ্ছে ততটুকুই শুধু কটেজ চিত্র। অথচ সেসব কটেজ কোথাও পাহাড় কেটে কিংবা প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে গড়ে উঠেছে। কিন্তু প্রতিটি কটেজে নেই অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা, জরুরি চিকিৎসা সহায়তা বা প্রাথমিক সুরক্ষা সরঞ্জাম। শুধু ভোর সকালে মেঘের ভেলা দেখাতে একদল লোভী বাণিজ্যিক চক্রের লুটতরাজের মাঠে নেমেছে। আগামীতে সাজেকের মতন বড় দুর্ঘটনা সম্ভাবনা যেন অতি সংকটে।

মিরিঞ্জা ভ্যালী স্বত্বাধিকারী মালিল জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, মিরিঞ্জা পাহাড়ে প্রায় ৮৯টি রিসোর্ট রয়েছে। সেসব রিসোর্টগুলো কোন অনুমোদন নাই। পাহাড়ে পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট করে আরো কয়েকটি কটেজ নির্মাণের চলমান। একাধিকবার প্রশাসন থেকে অনুমোদন নেয়ার বলা হলেও শুনছেন এই অবৈধ ব্যবসায়ীরা।

তিনি বলেন, আগে প্রতিটি কটেজ থেকে সাংবাদিকদের মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা চাদা দেয়া হত। এখন আপাতত দুই মাস চাদা তুলছেন না। আর অধিকাংশ কটেজে সাংবাদিকরা নিজেরাই মালিল আবার শেয়ার রয়েছে। তাদেরব অনুমোদন নাই বলে জানান তিনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আমরা অনেক আগে মিরিঞ্জা রিসোর্টে অভিযান চালিয়েছি। এখন নানা ব্যাস্ততা কারনে অভিযান চালানো সময় হচ্ছে না। তাছাড়া পাহাড় কিংবা পরিবেশ নষ্ট করে ব্যাঙের ছাতা মতন আরো রিসোর্ট বাড়ছে।

লামা নির্বাহী অফিসার মঈন উদ্দিন বলেন, লামা মিরিঞ্জা পাহাড়ে অধিকাংশ কটেজ অবৈধ। মালিকদের অনুমোদন নেয়ার কথা বলা হলেও কেউ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর যারা আবেদন করেছে সেসব বাছাই চলছে। সেসব কটেজে পরিবেশ অভিযান দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.