গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজশাহী চিনি কলের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যা রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি চিনিকলের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ এই পাঁচ অর্থবছর পর্যন্ত মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৯১ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষার্ধে এসে সেই লোকসানের বোঝা হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছে ২৮ কোটিতে। ১৯৬২ সালে রাজশাহীতে চিনি কল প্রতিষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যায় ১৯৬৫ সালে। দীর্ঘ পাঁচ যুগের বেশি সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে একই উৎপাদন পক্রিয়া চলমান থাকায় স্বাভাবিক কারনেই মেশিনের যন্ত্রাংশগুলো হারিয়েছে তার প্রকৃত কার্যক্ষমতা। চিনিকলটির পুরোনো যন্ত্রাংশ (মেশিনারিজ) পরিবর্তন করে আধুনিকায়ন করা হলে একই পরিমাণ আখে অধিক পরিমাণ চিনি উৎপাদন সম্ভব বলে মন্তব্য করেন রাজশাহী সুগার মিলস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ন কবীর। তবে বিগত সময়গুলোর চাইতে লোকসানের পরিমাণ এই অর্থবছরে কমবে বলেও আশা করেন তিনি। একশ কেজি আখের বিপরীতে রিকভারি চিনির পরিমাণ ৫.০৪ কেজি। নতুন মেশিন ও আধুনিক যন্ত্রাপাতির মাধ্যমে উৎপাদনে গেলে একশ কেজি আখের বিপরীতে রিকভারি বৃদ্ধি পেয়ে হবে সাত কেজির মতো। অর্থ্যাৎ প্রতি একশ কেজিতে দুই কেজি করে বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক পরিচালক জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আগামী ২৮ নভেম্বর আখ মাড়াই কাজের উদ্বোধন করবেন। এবার আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। চিনিকলের লোকসান কমানোর জন্য আমরা ব্যয় সংকোচন করার চেষ্টা করছি। রাজশাহী চিনি কলে স্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মচারি-শ্রমিকের সংখ্যা ৬২৮ জন। চিনি উৎপাদনের সময় প্রয়োজন পড়লে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নেয়া হয়। অন্যান্যবারের চাইতে এবার আখের উৎপাদন ভাল হয়েছে। সরকারিভাবে আখের দাম বৃদ্ধিসহ মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে আগের মতো সময়ক্ষেপন ও ভোগান্তিতে পড়ছেনা কৃষকরা। আখ সরবরাহের ক্ষেত্রে সহজলভ্য পন্থাও অবলম্বন করা হচ্ছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় চাষিরা আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
চিনিকল সূত্র বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৭৫-৮০ হাজার মে.টন আঁখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর যা ছিল ৭২ হাজার মে.টন। চলতি অর্থ বছরে বিগত ১৫ বছরের চাইতে বেশি পরিমাণ আখ মাড়াই হবে; এমনটাই প্রত্যাশা করছেন কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৬ হাজার একর জমিতে। চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৪শ’ ১২ একর জমিতে। অন্য বছরের চেয়ে এবার আঁখের ফলন ভাল হয়েছে। সেই জায়গা থেকে প্রতি একর জমি থেকে এবার ২০ থেকে ২৫ মে.টন আঁখ পাওয়া যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে কর্তৃপক্ষ। এবার রাজশাহীর ৪২টি সেন্টারে আঁখ নেয়া হবে। এছাড়াও অনেক কৃষক সেন্টার ছাড়াও সরাসরি চিনি কলেও আখ দিতে পারবেন। যারা সরাসরি চিনি কলে আখ দিবেন তারা পরিবহন ভাড়াও বেশি পাবেন। একজন কৃষক মিল গেটে এসে এক কুইন্টাল (১০০০ কেজি) আখ দিলে তিনি পাবেন ৬২৫ টাকা। যেটা গেলবছর ছিল ৬০০ টাকা। অন্যদিকে বিভিন্ন সেন্টারে আখ সরবরাহ করলে তিনি পাবেন ৬১২ টাকা। যেটা আগের বছর ছিল ৫৮৭ টাকা। কৃষকদেরকে নগদ পেমেন্ট ছাড়াও বিকাশের মাধ্যমেও তাদের আখের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিলে কর্মরতরা বলেন, চিনি কলের লোকসানের মূল কারণ হচ্ছে উৎপাদন ব্যয়। এক কেজি চিনি উৎপাদনে সর্বসাকুল্যে ব্যয় হয় ২৩৪ টাকা। আর ব্যাংক লোনসহ অন্যান্য ইন্টারেস্ট ধরলে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাড়ায় প্রায় ৩০০ টাকা। রাজশাহীর সোনালী ব্যাংকে এই চিনি কলটির ঋণের পরিমাণ রয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্য বছরগুলোতে উদ্বৃত্ত চিনি রেখে আখ মাড়াই শুরু হলেও এবার উদ্বৃত্ত চিনি নেই। প্রতিষ্ঠালগ্নে যে মেশিনপত্র চিনিকলে স্থাপন করা হয়েছিল সেই মেশিনপত্রগুলো মেরামত করেই চলছে রাজশাহী চিনি কলের উৎপাদন কর্মযজ্ঞ। এইসকল পুরোনো মেশিনের যন্ত্রাংশ মেইনটেনেন্স ও মেরামত খরচের পেছনেও ব্যয় হয় মোটা অংকের অর্থ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
