হাকালুকি হওরের সর্ববহৃৎ সরকারি জলমহাল ‘হাওরখাল’ বিলে চলছে মাছলুট। নামমাত্র খাস কালেকশনে গত ১৭ দিনে অন্তত ২ কোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিল দখল ও মাছ লুট নিয়ে মঙ্গলবার বিলের পাড়ে ত্রিমুখি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের প্রায় ২ হাজার একরের সর্ববৃহৎ গোটাউরা হাওরখাল গ্রুপ (বদ্দ) জলমহালটি ১৪৩১ বাংলা সনের ৩০ চৈত্র পূর্ববর্তী ইজারাদার মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি উন্নয়ন প্রকল্পে তিন বছরের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকায় লীজ নিয়ে ফিসিং সম্পন্ন করে। পরবর্তী তিন বছরের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকায় আরেকটি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি জলমহালটির ইজারা পায়। ওই মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে লীজ প্রদানের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় ঘটে যায় ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট। আর এই পরবর্তিত পরিস্থিতিতে একটি প্রভাবশালী মহল সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে দিয়ে ১৪৩২-৩৪ বাংলা সনের লীজের উপর মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন (১৫৬৬৪/২০২৪) করায়। আর এই রীট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট লীজের উপর স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তীতে জলমহালটি খাসকালেকশনে চলে যায়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, খাস কালেকশনের দায়িত্বে থাকা হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার ও এসিল্যান্ড অফিসকে ম্যানেজ করে বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী শীর্ষ নেতারা বিলের পাড়ে বাসা বানিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। আর তহশিলদারকে নামমাত্র রাজস্ব প্রদান করছে। গত ১৭ দিনে মাছ লুটেরা প্রভাবশালীরা অন্তত ১ কোটি টাকার মাছ লুট করে সরকারি কোষাগারে ১৫/১৬ লাখ টাকা জমা করেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। দিনে রাতে মাছ লুটের ঘটনায় মঙ্গলবার কয়েকশ মানুষ প্রতিবাদে হাওরখাল বিলে জড়ো হন। এসময় ত্রিমুখি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সূত্র জানিয়েছে, মাছ লুটের ভাগবাটোয়ারা পৌরশহরের বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বাড়িতেও হয়েছে।
বড়লেখা পৌর বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, হাকালুকি হাওরের হাওরখাল বিলের মাছ হরিলুটের খবর পেয়ে তিনিও ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। সেখানে তহশিলদারকে দেখতে পাননি। বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ মাছ আহরণ ও বিক্রির তদারকি করছেন। এসময় তিনি ১৭ নৌকা বোঝাই অন্তত ১০ লাখ টাকার মাছ বিক্রির জন্য অপেক্ষমাণ থাকতে দেখেছেন। স্থানীয় লোকজন জানান, গত ১৭ দিনে বিএনপি-জামায়াতের কয়েক নেতা অন্তত ২ কোটি টাকার মাছ লুট করেছে। সরকার কতটাকা রাজস্ব পেয়েছে তা জানেন না। এভাবেতো সরকারি একটি জলমহাল লুট হতে পারে না। প্রশাসন কি এদের কাছে জিম্মি হয়ে গেল।
গত ১৭ দিনে খাস কালেকশনে কত টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে তা জানতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাঈমা নাদিয়া ও খাসকালেকশনের দায়িত্বে থাকা হাকালুকি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার ইউসুফ জাবেরের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা কেউই ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
ইউএনও গালিব চৌধুরী জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারের নজরে গিয়েছে। স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি)-কে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।