ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত পাথর মিক্সার ডিপো যেটি স্থানীয়দের অবরোধ, মানববন্ধন, ঝাঁটা মিছিল ও প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ হয়েছিলো সেটি আবারও অদৃশ্য প্রভাবের ছায়ায় চালু হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুমের “দাপট” ও রহস্যজনক ছত্রছায়ায় বন্ধ হওয়া ডিপোটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যে ডিপোর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত ধুলায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখের রোগে আক্রান্ত হয়েছে শতাধিক মানুষ, যেখানে শিশু ও বৃদ্ধসহ হাঁপানি ও অ্যাজমায় মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন সেই ডিপো কিভাবে আবার চালু হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, গত মার্চ মাসে মিক্সার ডিপো বন্ধের দাবিতে সহস্রাধিক মানুষ ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়ক অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ, মহিলাদের ঝাঁটা মিছিল, সব মিলিয়ে এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সড়কের দুই পাশে পাঁচ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়, এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী ও ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাদের আশ্বাস ও মিক্সার ডিপোর কাজ বন্ধের নির্দেশের পরই আন্দোলন প্রত্যাহার করেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশ অমান্য করেই আবারও ডিপো চালু হয়েছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ডিপো পুনরায় চালু হওয়ার পেছনে রয়েছে স্থানীয় একটি অদৃশ্য প্রভাবশালী মহল, যারা ঠিকাদার মাসুমকে প্রশাসনিক নির্দেশ অমান্যে সহায়তা করছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আমরা যখন অবরোধ করলাম, ইউএনও এসে কাজ বন্ধ করলেন। সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। হঠাৎ কয়েকদিন না যেতেই দেখি রাতে-ভোরে পাথর ঢুকছে, মিক্সার চলছে, কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। কে অনুমতি দিলো? কার ক্ষমতায় কাজ চলছে?

ইউএনওর কঠোর নির্দেশের পরও কে বা কারা চাপ প্রয়োগ করে ঠিকাদার মাসুমকে আবার কাজ শুরু করতে সুযোগ করে দিলো তা তদন্ত হওয়া উচিত।

একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ডিপোর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত ধুলায় আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের বাড়িঘর। শতাধিক বিঘা জমির চাষাবাদ নষ্ট হওয়ার উপক্রম। রান্না করা ভাত, তরকারি, পানির গ্লাস, সবকিছুতেই কালো ধুলা পড়ে অখাদ্য হয়ে যাচ্ছে। অনেকের অ্যালার্জি, চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট আবার বাড়ছে।

মধুপুর চৌরাস্তার কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ঠিকাদার মাসুম প্রশাসনকে তোয়াক্কা করে না। নিজের প্রভাব দেখিয়েই আবার ডিপো চালু করেছে। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই মামলা-হামলা হতে পারে সেই ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। তারা আরও বলেন, মাসুমের প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুললে নানা উপায়ে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়।

স্থগিতাদেশ অমান্য করে ডিপো পুনরায় চালু করায় মাসুমের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ঠিকাদার মাসুম স্থানীয় প্রশাসনকে পাশ কাটিয়েই জনগণের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা সমাধান না করেই কাজ চালু করেছেন। সাধারণ মানুষের কষ্ট নিয়ে তিনি উদাসীন। তারা আরও জানান, এবার আর আশ্বাসে থামবো না। যদি দ্রুত ডিপোটি সম্পূর্ণভাবে অপসারণ না করা হয় তবে মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা দিতে বাধ্য হবো।”

ইউএনওর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এই ডিপো পুনরায় চালু হওয়া নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে। স্থানীয় জনমনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ইউএনওর নির্দেশে বন্ধ হওয়া একটি ক্ষতিকর স্থাপনা কিভাবে কার অনুমতিতে ঠিকাদারকে পুনরায় কার্যক্রম চালুর সুযোগ করে দিল?

এ ব্যাপারে ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুমের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এলাকাবাসীর দাবি অবিলম্বে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও সদর থানা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে ডিপো সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদ এবং যারা নির্দেশ অমান্য করে পুনরায় কাজ শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।