নাটোরের গুরুদাসপুরে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত মাদকবিরোধী অভিযান আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করেছে। স্থানীয়ভাবে ‘মাদক সম্রাট’ নামে পরিচিত শহিদুল ইসলাম ভম্বু (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া আক্তার সূর্য (৪০) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। রোববার রাত ৯টার দিকে উপজেলার যোগীন্দ্রনগর গ্রামে হঠাৎ করে চালানো এ বিশেষ অভিযানে পুরো এলাকা একপ্রকার টানটান উত্তেজনায় থাকে।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দুলাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বাড়িটি ঘিরে ফেলে। পরে তল্লাশি চালিয়ে ভম্বু দম্পতিকে আটক করা হয়। এসময় তাদের সহযোগী রুবেল আলী (২৯) কে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে তিনজনকে আদালতে হাজির করার পর বিচারকের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, তাদের তল্লাশিতে ১০৭ পিস ইয়াবা, ২৪৫ পুরিয়া হেরোইন, এবং মাদক বিক্রির ৫৬ হাজার ৫৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা এসব মাদকের পরিমাণ ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে এলাকাজুড়ে সক্রিয় একটি মাদকচক্র পরিচালিত হচ্ছিল।
এছাড়াও পুলিশি নথি অনুযায়ী, শহিদুল ইসলাম ভম্বুর বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ২১টি মামলা রয়েছে, যার বেশিরভাগই গুরুতর অপরাধের শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর স্ত্রী তানিয়া আক্তারের বিরুদ্ধেও ৯টি মাদক মামলা বিচারাধীন। পুলিশের বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই তারা একটি সক্রিয় মাদক কারবারী নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছিল, আর সেই নেটওয়ার্কে সহযোগী হিসেবে ছিল রুবেল আলী।
স্থানীয়রা বলেন,বহুদিন ধরেই যোগেন্দ্রনগর গ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় এই পরিবার সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ প্রচলিত। ভম্বু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চুরি, এমনকি এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ বহু বছরের। মাঝে মাঝে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে তারা আবার পূর্বের কর্মকাণ্ডে ফিরে যেত বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফলে যুবসমাজ মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছিল। তবে এতোদিন পরে তাদের আটক হওয়ায় আমরা বেশ স্বস্তি পেয়েছি। পুলিশের এই উদ্যোগ এলাকায় নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে এনেছে।”
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দুলাল হোসেন বলেন, “গুরুদাসপুরকে মাদকমুক্ত এলাকা ঘোষণা করতে আমরা ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছি। যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। সামনের দিনগুলোতে মাদকের বিরুদ্ধে আরও কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।