ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মা কুকুরের অজ্ঞাতে ৮টি ছানাকে বস্তা বন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শহর জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুক জুড়ে বইছে তীব্র সমালোচনার ঝর। সেইসাথে জড়িতকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করা হয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যার পর পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকায় গেজেটেড ভবনে বসবাসরত ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তার স্ত্রী নিশি বেগম কর্তৃক অমানবিকভাবে আটটি কুকুর ছানা ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের কেয়ারটেকার জাহাঙ্গির জানান, গেজেটেড ভবনে মা কুকুর সম্প্রতি আটটি ছানা প্রসব করে। রবিবার সন্ধ্যার পর ছানাগুলোকে দেখতে না পেয়ে মা কুকুরটি হন্যে হয়ে এদিক সেদিক খোঁজ করার পাশাপাশি বিকটভাবে কাঁদতে থাকে। সারারাতই মা কুকুরটিকে অফিসার্স ক্লাব এবং আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাসার দরজায় দরজায় ঘুরতে দেখা গেছে। এসময় খাবার দিলেও সে কোন কিছুতে মূখ দেয়নি। আমরা তখনও জানিনা, ছানাগুলো নেই। পরে ছানাগুলো নেই জানার পর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, সোমবার সকালে ইউএনও স্যারের আবাসিক ভবনের সামনে দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন স্যার ছেলেকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে কুকুর ছানার বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এসময় তার ছোট ছেলে বলে ওঠে আম্মু কুকুরের বাচ্চাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। একথা শুনে নয়ন স্যার দ্রুত স্তান ত্যাগ করেন। পরে পুকুরে যেয়ে দেখি মূখ বাঁধা বস্তা ভাসছে। তুলে এনে বস্তার মূখ খুলে দেখা যায় ছানাগুলো মরে আছে।
এঘটনার ছবিসহ দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক পোস্টেই কুকুর হত্যাকারীর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতে থাকেন অনেকেই। ফেসবুক মন্তব্যে সাবেক ইউএনও সুবির কুমার দাশ লেখেন, ‘এই হত্যাকান্ডের বিচার এর দাবী জানাচ্ছি।’ ‘মানুষ নামের কলঙ্ক ওই ব্যক্তি। ঘৃণা প্রকাশ করছি’, ‘ঘৃণিত কাজের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত’, ‘বিচার চাই’, ‘প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয় না। যে ডুবিয়ে মেরেছে সেও একদিন ডুবে মরবে না হলে তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ডুবে মরবে’, ‘ভাষা নেই কিছু বলার, তদন্ত করা হোক, কে এই মানুষ নামের কলংক’ এছাড়াও আরও অনেক মন্তব্য ফেসবুক পোষ্টে লেখা হয়েছে।
হত্যাকারী নিশির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বামী ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্থ। এর বেশী আর কিছু বলতে পারছি না।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন জানান, এটা খুবই অমানবিক। মা কুকুর ইতোমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে আমাদের লোকজন চিকিৎসা দিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলেছেন। এঘটনায় তিনি থানায় মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি মামলা করতে পারি কিনা জানা নেই। যদি করা যায় তাহলে অবশ্যই করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পরিষদ চত্বরে সংঘঠিত এ ঘটনায় আমি চরমভাবে মর্মাহত। সকালে পরিষদের অফিসারদের নিয়ে একদফা মিটিং করেছি। তদন্ত করা হচ্ছে। দোষির বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।