নিয়োগবিধি সংশোধন বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে চতুর্থ দিনের মতো চলমান কর্মসূচির অংশ হিসাবে শহীদ মিনার ছেড়ে মহাখালি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে স্বাস্থ্য সহকারীরা।
এ কর্মসূচির ফলে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের টিকাদান সেবা। এতে টিকা প্রাপ্তি মা ও শিশুরা সময় মত টিকা না পেয়ে নানান ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।
তবে প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠির এ ভোগান্তি কবে নাগাত শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য সহকারীরা বলছেন, তারা এ জনগোষ্ঠিকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত করে এ কর্মবিরতিতে যেতে চাননি,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা তাদের এ অবস্থান কর্মবিরতি দিতে বাধ্য করিয়েছেন।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি তাদের প্রস্তাবিত, প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস দেয়া কথা রেখে দাবি বাস্তরায়নের জিও (প্রজ্ঞাপন) আকারে প্রকাশ করেন, তাহলেই কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।
সংগঠনের নেতারা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠ ছাড়বেন না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তরা বার বার আমাদের প্রস্তাবিত দাবি যৌক্তিক বলে প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসই এভাবে দীর্ঘ ২৭ বছর পাড় করছেন। আর তাদেরকে ছাড় নই। আমাদের প্রতিশ্রুত ও আশ্রাস দিয়ে তারা ঘুমিয়ে পরছেন। তাই অধিদপ্তরে কর্মসূচিতে আসছি তাদের ঘুম ভাঙাতে।
এর জন্য যদি দেশের মা ও শিশুরা মৃত্যুর ঝুকি বারে তাহলে দায়ি হবেন, একমাত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্ত ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই।
তবে দাবি আদায়ের বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে তারা বলেন, 'আমাদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না করা পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না।' প্রযোজে আমার আরো কঠোর হতে বাধ্য হবো।
কর্ম সূচিতে অংশ নেয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, তারা মূলত প্রান্তিক পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচিসহ জনস্বাস্থ্যের সেবায় সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে কাজ করেন। মানব শিশু জন্মের পর পরই তাদের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য ১০টি মারাত্মক রোগের প্রতিশোধক টিকা একমাত্র তারাই প্রদান করেছেন। তাদের কাজের বিনিময়েই বিশ্বে টিকাদানে বাংলাদেশ রোড মডেলে পরিনত হয়েছে। দেশে থেকে গুটি বসন্ত দূর হয়েছে, মাতৃ-শিশুমৃত্যু হৃাস পেয়েছে, দেশ থেকে পোলিও মুক্ত হয়েছে। হাম-রুবেলা,করোনার টিকা, জরায়ূমুখের ক্যান্সারের (এইচপিভি)টিকা সর্বশেষ প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েড (টিসিভি)’র টিকা তারাই সফল ভাবে প্রদান করেছেন।
তারা আরো বলেন, তাদের কাজের ফলে দেশে গড় আয়ূ বৃদ্ধি হয়েছে এবং আন্তজার্তিক অঙ্গণে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতকে সুপিরচিত লাভ করেছেন। যাদের কাজের বিনিময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ গর্বিত আজ তারাই অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ঢাকা মহাখালি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে এ অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের ৬৪ জেলা থেকে হাজার হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা ব্যানার, ফেষ্টুন ও মনিপাতা নিয়ে অংশ নেই।
‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে এই অবস্থান কর্মবিরতি শুরু করেন তারা। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিল, ২৮ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে তারা এ কর্মবিরতিতে যাবেন।
তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতাসংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা, সকল স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শককে প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতন স্কেল পুর্ননিধারণের সময় প্রাপ্ত টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা ও ইতোমধ্যে ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্স সম্পন্নকারীদের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
এর আগেও গত অক্টোবরে একই দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেন। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তখন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল।