রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংগ্রহ থেকে বাছাই করা ২৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের আলোকচিত্র নিয়ে সপ্তাহব্যাপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)। ‘আ হিস্ট্রি অফ বাংলাদেশ ইন ২৫ অবজেক্টস’ শিরোনামের প্রদর্শনীটি আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ইউল্যাব ক্যাম্পাসে উদ্বোধন করা হয়। আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ইউল্যাব ক্যাম্পাসে চলবে প্রদর্শনীটি। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এটি। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও এর বৈচিত্র্যময় বস্তুগত ও অবস্তুগত ঐতিহ্যের এক অনন্য ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
গত ২৮ নভেম্বর রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের হেরিটেজ ফেস্টিভ্যালের অভিজ্ঞতা আরও বড় পরিসরে তুলে ধরতে ইউল্যাবের জেনারেল এডুকেশন বিভাগ এবং সেন্টার ফর আর্কিওলজিক্যাল স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, ডার্যাম ইউনিভার্সিটির ইউনেস্কো চেয়ার অন আর্কিওলজিক্যাল ইথিক্স অ্যান্ড প্র্যাকটিস ইন কালচারাল হেরিটেজ এবং ইউল্যাব যৌথভাবে আয়োজন করেছে প্রদর্শনীটি। আয়োজনটির সর্বাত্মক সহযোগিতায় রয়েছে কালচারাল প্রটেকশন ফান্ড। কালচারাল প্রটেকশন ফান্ড ব্রিটিশ কাউন্সিলের নেতৃত্বে যুকরাজ্য সরকারের ডিজিটাল, কালচার, মিডিয়া এবং স্পোর্ট বিষয়ক মন্ত্রণালয় (ডিসিএমএস) এর সাথে অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়। এর প্রধান কাজ হলো সংঘাত এবং/ অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা স্থাবর এবং অস্থাবর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করা এবং টেকসই সামাজিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউল্যাবের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মিলন কুমার ভট্টাচার্য।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর মারিয়া রেহমান বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষায় যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা এবং কালচারাল প্রটেকশন ফান্ডের ভূমিকা ব্যক্ত করে বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকেই ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল প্রটেকশন ফান্ড প্রোগ্রামটি বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯,৫০০টি পুরাকীর্তি এবং আর্কাইভ পুনরুদ্ধার করেছে এবং ১৫৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন চলমান ঐতিহ্য সংরক্ষণে সমর্থন করে আসছে। এই ফান্ডটির উদ্দেশ্য দক্ষিণ এশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা। প্রথমবারের মত বাংলাদেশে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত করতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত। জনসাধারণ, সরকারি প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা ও গবেষণাসহ সমাজের সকল স্তরের অন্তর্ভূক্তি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টাই সংঘাত কিংবা জলবায়ু প্রতিকূলতার কারণে ঝুঁকিতে থাকা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে পারে – এই উদ্যোগটি তারই প্রতিফলন। আমরা আশাবাদী যে এই উদ্যোগ বৃহত্তর সামাজিক অংশীদারিত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে।
অনুষ্ঠানে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, কালচারাল প্রটেকশন ফান্ড–এর সহায়তায় বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে আয়োজিত ‘ক্যাপাসিটি স্ট্রেংথেনিং ট্রেনিং প্রোগ্রাম’–এর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তারই ধারাবাহিকতায়, ‘ব্রেকিং দ্য মিথ: এনগেজিং মিউজিয়াম প্রফেশনালস অ্যান্ড কমিউনিটি’ শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন দেন ইউনেস্কো চেয়ার অধ্যাপক রবিন কনিংহ্যাম।
অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইউল্যাবের জেনারেল এডুকেশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং সেন্টার ফর আর্কিওলজিক্যাল স্টাডিজ–এর পরিচালক অধ্যাপক শাহনাজ হুসনে জাহান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউল্যাবের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান; যুক্তরাজ্যের ডার্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমিলি উইলিয়ামস, ড. মার্ক ম্যানুয়েল ও ড. ক্রিস্টোফার ডেভিস; ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস (ইকোমস) নেপালের উপদেষ্টা ড. কাই ওয়েইজ; বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান জনাব আসলাম রেজা; বাংলাদেশের জাদুঘর এবং পুরাকীর্তি ক্ষেত্রে নিয়োজিত বিভিন্ন পেশাদার, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ এবং ইউল্যাবের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দর্শনার্থীদের জন্য এ প্রদর্শনী বাংলাদেশের এক লাখ বছরেরও বেশি সময়ের সমৃদ্ধ ইতিহাসকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার এক অনন্য সুযোগ।