ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
রাজশাহী নগরের দরগাপাড়া মৌজায় অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের নির্মিত রাজবাড়িটিসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থাপনা সংরক্ষণসহ তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সাথে সাক্ষাৎ করে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেছেন রাজশাহীর নাগরিক সমাজ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী এবং রাজশাহীর ইতিহাস-ঐতিহ্য গবেষকসহ প্রমুখ।
সাক্ষাৎকালে পঞ্চকবির অন্যতম কান্ত কবি রজনীকান্ত সেনের বসতভিটা, মিঞাপাড়ায় অবস্থিত রাজা হেমেন্দ্র কুমারের বসতভিটা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের গুড়িয়ে দেয়া বসতভিটা, তালন্দ ভবনসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শহর। অনেক আগে থেকে এই নগরটি প্রাচীন বাংলায় পরিচিত ছিল। রাজশাহী শহরের নিকটে প্রাচীন বাংলার বেশ কয়েকটি রাজধানী শহর অবস্থিত। প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজশাহী ছিল প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অংশ। বিখ্যাত সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের রাজধানী ‘বিজয়পুর’ বর্তমান রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে অবস্থিত ছিল। মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী পরিচিত ছিল রামপুর বোয়ালিয়া নামে। এর সূত্র ধরে এখনও রাজশাহী শহরের একটি থানার নাম বোয়ালিয়া।
এরকম একটি ঐতিহ্যমন্ডিত শহরে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বসবাস করেছেন এবং তাদের স্মৃতিবিজরিত ভবন তথা বাসস্থান রয়েছে। এমন একটি ঐতিহাসিক বাড়ির অবস্থান রাজশাহী নগরের দরগাপাড়া মৌজায়। বাড়িটি বানিয়েছিলেন দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমার রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়। জনশ্রুতি আছে মহারানি হেমন্তকুমারী (১৮৬৯-১৯৪২) পুঠিয়া থেকে রাজশাহী শহরে এলে এই বাড়িতে থাকতেন। বাড়িটির সামনে রয়েছে একটি নাগলিঙ্গম ফলের গাছ। ভবনটির প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য ছিল কি না, যাচাই না করেই সেটি ভাঙ্গার জন্য নিলামে তুলা হয়েছে যা মোটেই সঠিক হয়নি।
স্মারকলিপির দাবিসমূহ হলো- ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি ভাঙ্গার সাথে সংশ্লিষ্টদের কৈফিয়তের আওতায় আনতে হবে, নাগলিঙ্গম গাছ এবং বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসাথে বাড়িটিকে হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করতে হবে; রাজশাহী জেলা এবং বিভাগে একটি প্রত্মতাত্ত্বিক জরিপ করতে হবে এবং সেগুলো ক্যাটাগরি অনুযায়ী সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে; রাজশাহীতে অবস্থিত কান্ত কবি রজনীকান্ত সেনের বসতভিটা, মিঞাপাড়ায় অবস্থিত রাজা হেমেন্দ্র কুমারের বসতভিটা, তালন্দ ভবনসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই দাবি সম্বলিত স্মারকলিপির অনুলিপি রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, গবেষক ও নৃবিজ্ঞানী শহিদুল ইসলাম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক, ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী নাদিম সিনা, হাসিবুল হাসনাত রিজভিসহ প্রমূখ।
রাজশাহী মহিনগরীর সিনিয়র সিটিজেন ও সচেতনরা এবিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন,
"দিঘাপতিয়ার রাজা হেমেন্দ্র কুমারের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের নির্মিত রাজবাড়িটিসহ নগরীর আরোকিছু ভাঙ্গার পর টনক নড়লো সংশ্নিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠণসহ সংশ্লিষ্টদের"। তারা আরো বলেন, রাজশাহী শহরের ডেভলপারস কোম্পানীগুলোর জন্য শহরের অনেক ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলো ইতোমধ্যেই ভেঙ্গে তদস্থলে নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বাড়িগুলো এই শহরের জন্য গর্বের স্থাপনা হিসেবে সেগুলো সঁরক্ষণ করা উচিত বলে দাবি সচেতন মহলের।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
