সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন শ্যাম সুন্দর মন্দির, যা স্থানীয়ভাবে মঠবাড়ি মন্দির নামে পরিচিত আজ সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
৬০ ফুট উঁচু টেরাকোটা ফলক খচিত পিরামিড আকৃতির এই স্থাপনাটি প্রাচীন স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন হওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতিতে মন্দিরের দেয়াল, কারুকাজ ও কাঠামো ক্ষয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক শিল্পকর্মের সৌন্দর্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, মন্দির চত্বরে থাকা তিনটি স্থাপনাই নাজুক অবস্থায়। দেয়ালে ফাটল, নকশা খসে পড়া এবং চারপাশে ভগ্নাংশ ছড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা মনে করেন সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মন্দিরটি সাতক্ষীরার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
ইতিহাস অনুযায়ী, শ্যাম সুন্দর মন্দিরের নির্মাণকে ঘিরে রয়েছে দুটি প্রচলিত মত। কেউ মনে করেন—চারশ’ বছরেরও আগে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মন্দিরটি নির্মাণ করেন। অন্য মতে, ১৭৬৭ সালে তৎকালীন জমিদার হরিরাম দাশ কিংবা দূর্গাপ্রিয় চৌধুরী এই মন্দির নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয়, একসময় মন্দিরের আশেপাশে আরও ৯টি মন্দির ছিল, যা এখন ইতিহাসের অংশ মাত্র।
ইট,সুড়কি নির্মিত তিনতলা পিরামিড আকৃতির মন্দিরটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে বিশেষ কক্ষ ও মন্ডপ। অতীতে এখানে কষ্টিপাথরের ১২টি শিবলিঙ্গ এবং স্বর্ণের তৈরি রাধা কৃষ্ণের মূর্তি স্থাপন করা ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা রানী বিশ্বাস বলেন, এই মন্দির শুধু স্থাপত্য নয়, তৎকালীন সমাজব্যবস্থা ও ইতিহাসের মূল্যবান অংশ। রক্ষাণাবেক্ষণ না থাকায় সবকিছু ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ খুব জরুরি।
আরেক স্থানীয় বিমল মণ্ডল বলেন, এটি সংরক্ষণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।
এত ঐতিহাসিক ও শিল্পসমৃদ্ধ স্থাপনাটি এভাবে ভগ্নদশায় পড়ে থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।