× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

জীবননগরে ৫ কোটি টাকার পানি শোধনাগার ব্যবহারহীন—অবহেলায় জীর্ণ প্রকল্প

অনিক সিদ্দিকী তন্ময়,জীবননগর:

০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:১৩ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌরসভায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগারটি ৫ বছর ধরে অচল পড়ে আছে। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলেও আজ পর্যন্ত একদিনও চালু করা হয়নি এ প্রকল্প। ফলে বিশুদ্ধ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌর এলাকার অন্তত ৫ হাজার মানুষ।

অচল অবস্থায় পড়ে থাকা শোধনাগারটিতে কয়েক দফায় চুরি ও নষ্ট হয়ে গেছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। সুইচ, মোটর, ফিল্টার, পাইপ, রিজার্ভ ট্যাঙ্ক, পাম্প গ্যালারি, জেনারেটর ও ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। ওভারহেড ট্যাঙ্ক ও পাম্প হাউজ পরিণত হয়েছে জনমানবশূন্য পরিত্যক্ত স্থাপনায়। চারপাশ জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ভবনগুলোও জরাজীর্ণ।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘পৌরসভা থানা গ্রোথ সেন্টার’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালে শোধনাগারের কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকার প্রকল্পে শোধনাগার, পাম্প হাউজ ও ৩০০ লাইন পাইপ সংযোগ দেওয়া হয়। পরে পৌরসভা নিজ উদ্যোগে আরও ২০০ সংযোগ স্থাপন করে।এতসব উদ্যোগের পরও এখনো এক ফোঁটা বিশুদ্ধ পানি পায়নি পৌরবাসী।

জীবননগর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, “সরকার অনেক টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ করেছে। কিন্তু একদিনও এটি চালু করা সম্ভব হয়নি। আমরা বারবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি—তবুও কোনো সমাধান আসেনি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মূল প্রকল্প ঠিকাদার মনির ট্রেডার্স কাজটি পায়। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা চাপ প্রয়োগ করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে নিজেদের ব্যবস্থায় কাজ সম্পন্ন করেন। জীবননগরের ‘রুপা কনস্ট্রাকশন’-এর সাইফুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদারের নামও আসছে অনিয়মের অভিযোগে।

এদিকে প্রকল্প হস্তান্তর নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা রাজিব হাসান রাজু বলেন, “আমরা সঠিকভাবে কাজ করে পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেছি।” তবে পৌরসভার দাবি—তারা এখনো কোনো হস্তান্তরপত্র পায়নি।

রাজিব রাজুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় রাষ্ট্রপতি–প্রধানমন্ত্রীর সফর দেখিয়ে জরুরি কাজের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎসহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদক তদন্ত করছে। এসব অভিযোগের কারণেই তাকে বদলি করা হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

জীবননগর পৌর প্রশাসক সৈয়দজাদী মাহবুবা মঞ্জুর মৌনা বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিষয়টি তদন্ত শুরু করি। বারবার নথি চাইলেও কেউ ফাইল দেয়নি। এত টাকার প্রকল্প নষ্ট হয়ে আছে—এটা সত্যিই দুঃখজনক। বিষয়টি আমি ডিসি স্যার ডিডিএলজি স্যারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ জানায়, লোকবল সংকটের কারণে শোধনাগার চালু করা সম্ভব হয়নি। দরকারি টেকনিক্যাল স্টাফ না থাকায় সিস্টেম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। শোধনাগারটির দৈনিক সাড়ে ৩ হাজার ঘনমিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও তা কাগজেই সীমাবদ্ধ।

জীবননগর পৌরবাসী জানান, ঠিকাদার দায়সারা কাজ করেছে। একটা প্রকল্পটি চালুর আগেই কি ভাবে যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়।রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সব কিছু চুরি হয়েছে। 

স্থানীয় লোকজন আরো বলেন, কয়েক মাস ট্রায়াল চালিয়ে হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা হয়নি। এখন ভবন, কোয়ার্টার, পাম্প–সবই নষ্ট। সুইপারদের অস্থায়ী থাকার জায়গায় পরিণত হয়েছে বহু কোটি টাকার স্থাপনা। যে প্রকল্প ৫ বছরেও চালু হয়নি, তার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলো কেন? প্রকল্পটি আদৌ আর চালু হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

সাধারণ মানুষের দাবি যন্ত্রাংশ মেরামত করে দ্রুত শোধনাগার চালু করা হোক,বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক,প্রকল্পে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.