× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নদী থেকে প্রকাশ্যে মাটি লুট, হুমকিতে কৃষিজমি ও বসতবাড়ি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম । আপডেটঃ ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:৩১ পিএম

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে প্রকাশ্যে দিনেদুপুরে প্রভাব খাটিয়ে নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। ভেকু ও ডাম্পার ব্যবহার করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড়ের মাটি উত্তোলন করে নিকটবর্তী বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছেন। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ভাঙনের শঙ্কা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এতে ইতিমধ্যেই নদী পাড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি হুমকির মুখে অন্তত কয়েক একর কৃষি জমি। ভাঙ্গন আতংকে নদীর দুপাশের অন্তত কয়েকশো ঘরবাড়ি। ইতিমধ্যেই দুটি বাড়ী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান উজ্জ্বল চৌধুরী গোসাইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গোসাইরহাট ইউনিয়নের চেউয়াতলী এলাকার স্থানীয় একটি ইট ভাটার মালিক। 

সরজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাট উপজেলা চেউয়াতলী এলাকায় মেঘনার শাখা জয়ন্তী নদীতে প্রকাশ্যে দিনের আলোতেই চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। নদীর পাড়ে রাখা ভেকু দিয়ে বিশাল আকারে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কয়েকজন শ্রমিক নিয়মিত ডাম্পারে করে মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে পাশের তিনটি ইটভাটায়। সবকিছুই ঘটছে প্রকাশ্যে তবে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রশাসনের সহযোগিতা পায় নি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। নদীর পাড়ের মাটি কাটার ফলে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের গর্ত। বর্ষায় এ অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যেই পাঁচ’শ’ মিটার কৃষি জমিতে ফাটল ধরেছে। জমিতে বালু জমে থাকায় উৎপাদন কমে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় কৃষকরা। ইতিমধ্যেই নদী পাড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি হুমকির মুখে অন্তত কয়েক একর কৃষি জমি। ভাঙ্গন আতঙ্কে নদীর দু’পাশের অন্তত কয়েক’শো ঘরবাড়ি। এর মধ্যেই দুটি বাড়ী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী অবিলম্বে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করা এবং অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান উজ্জ্বল চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। অসাধু কিছু কর্মকর্তাদের ম্যনেজ করে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়মিতভাবে নদীপাড়ের মাটি ও কৃষি জমির মাটি বিক্রি করছেন। প্রশাসনের তদারকি কম থাকায় সেই সুযোগে আইন অমান্য করে নদীর পাড়কে ব্যক্তিগত খনিজ সম্পদে পরিণত করেছেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার চেউয়াতলী এলাকায় নিজের পাঁচ-শতক জমিতে কৃষি কাজ উৎপাদন করছেন স্থানীয় কৃষক আমির হোসেন। তার জমির মাথায় জয়ন্তী নদী। গতকাল শনিবার বিকেলে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, “ভাই নদীর পাড় একেবারে নষ্ট করে ফেলছে। আমরা ভয় পাই কখন আমার জমি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। বললে উল্টো হুমকি দেয়। আমি কয়েকবার তাকে নিষেধ করেছি কিন্তু তিনি কোন কথায় শুনে না।  উজ্জ্বল চৌধুরী বলে আমি নদীর মাটি বিক্রি করি আপনার সমস্যা কি। 

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক  শিক্ষক বলেন,“এলাকায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, কিন্তু কাউকে কিছু বলার সাহস নেই। সবাই জানে তার বিরুদ্ধে বললেই সমস্যা হবে। তাই ভয়ে কেউ কথা বলে না। এভাবে নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করা হলে আগামী বর্ষায় নদী পাড়ের ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাই প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা হউক। 

স্থানীয় কৃষক রহিম সরদার বলেন, আমাদের এই নদীর পাড়টাই ছিল একমাত্র ভরসা। এখানেই ছিল আমাদের ফসল আমাদের চাষের জমি। এখন সবকিছু আমার চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ওই যে যিনি মাটি কাটে আমরা তার নাম নিলে বিপদ হবে তাই আমি নাম বলতে চাই না। সে ভেকু নামিয়ে দিন-রাত মাটি কাটে। আমরা দূর থেকে চেয়ে দেখি আমাদের জমি আমাদের ঘরের সামনে বালুর পাহাড় তৈরি হচ্ছে। আমি ২০ বছর ধরে এই জমিতে ধান চাষ করি। বছরে দুইবার ফসল উঠত। সেই টাকায় আমার ছেলের লেখাপড়া, মেয়ের বিয়ে—সবই চলত। কিন্তু এখন দেখেন জমিতে পানি উঠলেই মাটি ধসে যায়। গত বর্ষায় আমার অর্ধেক জমি নদীতে মিশে গেছে। আরও এক-দুই বছর এভাবে চললে হয়তো ঘরটাও থাকবে না।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত যুবদল নেতা মাহফুজুর রহমান উজ্জ্বল চৌধুরী মালিকানাধীন ইটভাটায় গিয়ে সরাসরি তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। কথা হয় মুঠোফোনে মাটি বিক্রি করা বিষয় জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হয় নি। 

এ ব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. রৌশন আহমেদ বলেন, “নদী থেকে অবৈধভাবে বালু কিংবা মাটি কেটে বিক্রি সম্পুর্ন অবৈধ। অভিযোগ পেয়েছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.