মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব ওয়ানগালা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার ফুলছড়া গারো লাইন মাঠে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন এলাকার গারো সম্প্রদায়ের মানুষ। সকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তারা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন। মাঠে তৈরি প্যান্ডেলের ভিতর শিল্পীরা হারমোনিয়াম, গিটারসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে ওয়ানগালার গান পরিবেশন করেন। সেই সুরে তালে নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন গ্রামের মানুষ।
শ্রীচুক গারো নকমা এসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে গারো খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনায় অংশ নেন। এরপর নতুন ফসল উৎসর্গ ও গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানের পরিবেশনা হয়।
সংগঠনের সভাপতি অনুপ চিসিম এর সভাপতিত্বে ও গারো নকমা এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজং এর সঞ্চালনায় ওয়ানগালা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন। এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব), মনিপুরী ললিতকলা একাডেমির উপপরিচালক প্রভাস সিংহ, জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নিলয় রশিদ ও ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া।
গারো সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান, ‘ওয়ানা’ অর্থ দেবদেবীর দানের সামগ্রী এবং ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। ফসল ঘরে তোলার আগে শস্যদেবতা মিসি সালজং এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ও প্রার্থনা করতে এ উৎসব পালিত হয়। এখন খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণের পর নতুন ফসল যিশু খ্রিস্টের নামে উৎসর্গ করেন তারা।
গারো নকমা এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজং বলেন, ওয়ানগালা আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন নবান্ন উৎসব। নতুন ফসল দেবতার নামে উৎসর্গ না করে আমরা গ্রহণ করি না। একইসঙ্গে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এ আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য খাওয়া নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন।
ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি ছাড়াও আয়োজন করা হয় তাদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারো কিশোরীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী গান ‘ওয়ানগালা ওয়ানগালা’ গানের সঙ্গে নৃত্য করেন। ফুলছড়া চা বাগান মাঠে ওয়ানগালাটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।