১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে পালিয়ে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা বরিশালের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং সর্বত্র স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু হওয়ার পর বরিশালের মুক্তিযোদ্ধারা তৎকালীন পুলিশ সুপারের কাছ থেকে অস্ত্রাগারের চাবি নিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করেন। ২৬ মার্চ ভোরে ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এমএ জলিলকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বরিশালের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম স্বাধীন বাংলা সচিবালয় গঠন করেন এবং এক মাস ধরে এখান থেকে অভিযান পরিচালনা করেন।
২৫ এপ্রিল পাকিস্তানিবাহিনী সড়ক, আকাশ ও নৌপথে একযোগে বরিশাল আক্রমণ করে। চরবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বাধা পেয়ে গণহত্যা চালানোর পর তারা কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াপদা) অফিসে দক্ষিণাঞ্চলীয় হেডকোয়ার্টার এবং টর্চার সেল স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে এই ওয়াপদা সংলগ্ন খাল ও ব্রিজে নিরীহ মানুষদের ধরে এনে গুলি করে হত্যা করা হতো। বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরীর মতে, গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ওয়াপদা কলোনির মতো এত বড়ো নির্যাতন ক্যাম্প ও বধ্যভূমি আর কোথাও ছিল না, যেখানে হাজার হাজার মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।
ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ তীব্র হলে ৭ ডিসেম্বর রাত থেকে শহরে অনির্দিষ্টকালের সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। ৮ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানি বাহিনী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে বৈঠক শেষে বরিশাল ছেড়ে নৌপথে পালানোর উদ্যোগ নেয়। এ সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী পলায়নরত পাকিস্তানি বাহিনীর গানবোট ও লঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে, এতে স্থানীয় পাক প্রধানসহ বহু দোসর নিহত হয়। এরপর মুক্তিসেনারা শহরে প্রবেশ করে এবং বরিশালের দীর্ঘ নয় মাসের দখলদারিত্বের অবসান হয়।
বর্তমানে বরিশালের ওয়াপদা কলোনিতে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় নির্যাতন ক্যাম্প, বাংকার, বধ্যভূমি, স্মৃতিস্তম্ভ ‘৭১, ওয়াকওয়ে, এবং স্বজনদের স্মৃতিকথার গ্যালারি নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক জানান, এর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার একটা বড় নৃশংসতার ইতিহাস সংরক্ষিত হয়েছে, যা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে।