× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ফুটপাতের পর সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ দখল, যানজটে নাকাল পথচারীরা

বিপ্লব শেখ, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি:

০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৩ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত মূল সড়কের দু’পাশের ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরেই দখল হয়ে আছে। এবার সেই দখলদারিত্ব ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়কের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে বসেছে অবৈধ দোকানপাট। এতে যানজট যেমন তীব্র আকার ধারণ করেছে, তেমনি পথচারীদের চলাফেরাও হয়ে উঠেছে কষ্টকর।

যানজটকে সঙ্গী করেই নিত্যদিনের কর্মক্ষেত্র এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে নগরীর মানুষকে। নগরীর লক্ষ্মীবাজার এলাকা এবং আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, অফিস-আদালত ও নানান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিদিন এই পথ ধরে যাতায়াত করে হাজার হাজার মানুষ। ভোর হতেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ছুটে আসে স্কুলে, সকাল আটটা বাজতেই শুরু হয় ক্লাস। 

সকাল হতেই দোকানিরা ফুটপাত ও সড়ক দখল করে বসাতে শুরু করে দোকান। ফলে সকাল থেকেই এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়ে যায় যানজট ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ। ব্যস্ততম এই সড়কে প্রতিনিয়ত পথচারী, শিক্ষার্থী এবং অফিসগামীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। ফুটপাত দিয়ে চলাচলের সুযোগ না থাকায় পথচারীদের বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে মূল সড়ক দিয়ে। এতে দুর্ঘটনার কবলেও পড়ছেন অনেক পথচারীরা।

পুরান ঢাকার এ অংশে সড়কের দু'পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার কাজ কিছুদিন পর পর লেগেই থাকে। একের পর এক খানাখন্দ ও ড্রেন সংস্কার কাজ চলায় সড়কে ধুলাবালিও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এতে দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখা হয় সড়ক, ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটসহ নানান ভোগান্তি। এছাড়াও রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং , রিকশা চালকদের যাত্রী উঠোনো নামানোর কারণে পুরো পথ জুড়ে যানজট ও বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ফুটপাতসহ প্রধান সড়কের দু'পাশই অবৈধ দোকানীদের দখলে । একপাশে সড়কসহ ফুটপাতে জামা-কাপড়, জুতা-স্যান্ডেলে ,বাচ্চাদের খেলনা ও কসমেটিক্সের সারি সারি অবৈধ দোকান সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা। অপর পাশে সড়কে ফুটকোটের দোকান এবং ফুটপাতে ক্রেতাদের বসার জন্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে চেয়ার-টোল। দোকানে বিক্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো পথই কার্যত বন্ধ হয়ে যায়, ফলে পথচারীদের বাধ্য হয়েই সড়কে নেমে চলাচল করতে হচ্ছে।

সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই এই পথে যানজট সৃষ্টি হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি আরও তীব্র আকার ধারণ করে। দুপুর বারোটার দিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ছুটি হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় আরও বাড়ে, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ রিকশায়, আবার কেউ বাসায় ফেরার জন্য রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। প্রতিদিন এই সময় লক্ষ্মীবাজারসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

এরপর থেকে সারাদিন এ পথে যানজট লেগেই থাকে। মানুষেরও যেন জট হয়! দলে দলে মানুষ ছুটে চলছেন,কেউ একাকী, কেউ শিশু সন্তানকে নিয়ে, আবার কেউবা প্রিয়জনের হাত ধরে ধুলাবালি আর যানজট পেরিয়ে নিমিষেই হারিয়ে যাচ্ছেন ভিড়ে। মূহূর্ত পরই আবার দেখা মেলে নতুন নতুন মুখের।

বিকেল ঘনিয়ে যখন নগরীতে সন্ধ্যা নামে যানজট তখন আরো প্রকট হয়ে ওঠে। নগরীতে সন্ধ্যা নামার আগেই ফুটপাত ও রাস্তাজুড়ে ফুটোকোট, শাকসবজি ও নানা পণ্যের আরো দোকান সাজিয়ে বসতে শুরু করেন  অবৈধ ব্যবসায়ীরা। ফলে যানজট আরো তীব্র হয়ে ওঠে , সারাদিনের অফিস শেষে ক্লান্ত শরীরে বাসার উদ্দেশ্যে ফেরা মানুষকেও এই যানজটের ভার বহন করতে হয়।

সন্ধ্যা নামতেই ফুটপাত দোকানপাটে বৈদ্যুতিক আলো ঝলমল করে। মূল লাইন থেকে তার টেনে দেওয়া হয়েছে লাইট ও ব্লেন্ডারের সংযোগ, খোলা আছে তার যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। রাত্রি গভীর হলে দোকানিরা দোকান গুছিয়ে ময়লা আবর্জনার স্তূপ রাস্তায় ফেলেই চলে যায়। এতে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে এবং চারদিকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।

মকবুল হোসেন নামে এক পথচারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন,  ফুটপাত অনেক আগেই দখল হয়ে গেছে, ফুটপাত দিয়ে এখন হাঁটার মতো কোনো জায়গাই নেই। এর সঙ্গে রাস্তায় আবার অবৈধ দোকানপাট বসায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এই পথে  যানজট লেগেই থাকে, চলাফেরা করাই এখন কঠিন।

তিনি আরও বলেন,  রাস্তায় এখন প্রচুর ধুলাবালি রয়েছে। তার ওপর রাস্তা ও ড্রেনের কাজ তো লেগেই থাকে। ফলে এই পথে সবসময়ই যানজট থাকে। পাঁচ মিনিটের পথ রিকশায় যেতে কখনো কখনো ৩০ মিনিটও লেগে যায়। 

আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ফুটপাত দখলের পর এখন সড়কের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অবৈধ দোকানীরা দখল করেছে। এতে এলাকাজুড়ে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। ফুটপাত দখল হওয়ায় এখন আমাদেরকে বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়। সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। চলার পথে অনেক সময় রিকশা চালকেরা অসাবধানতাবশত পায়ের ওপর দিয়ে রিকশা তুলে দেন , ধাক্কা লাগিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

তারা আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ক্যাম্পাসে আসতে হলে বা অন্য কোথাও যেতে চাইলে পড়তে হয় চরম বিপাকে। যানজটের কারণে রিকশায় করেও আসা যায় না,আর হেঁটে আসলেও লাগে অনেক সময়। কলেজের মূল ফটকের সামনে অবৈধ দোকানপাট দিয়ে ঘেরা, হাঁটাচলা করার মতো পরিবেশই নেই। দোকানে বৈদ্যুতিক লাইনের তার গুলোও বেরিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। কিছুদিন আগে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দোকানপাট উঠিয়ে দেয়া হলেও তার কয়েকদিন পর থেকে আবার দোকানপাট বসে যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন,  আমরা উচ্ছেদ করছি, কিন্তু আবার সঙ্গে সঙ্গেই বসে যাচ্ছে। ফুটপাত ও রাস্তা জনগণের চলাচলের জন্য। আমরা ফুটপাত তৈরি করছি, মেরামত করছি, রাস্তা ঠিকঠাক রাখতে চেষ্টা করছি, কিন্তু যারা দখলদার তারা দখল করেই যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের ধরে মামলা দিলে বলবে সিটি কর্পোরেশন অমানবিক কাজ করছে। এলাকাবাসী যদি না চায়, তাহলে কেউ রাস্তায় বসতে পারে না। যারা বসাচ্ছে তারা ওই এলাকারই লোক বাইরের কেউ তো না। তাই সামাজিক সচেতনতা আপনাদেরই তৈরি করতে হবে। ঠিক আছে, আমরা আবারও উচ্ছেদ করে দিবো।

ড্রেন সংস্কার কাজ সারা বছর না করে নির্দিষ্ট সময়ে করার ব্যাপারে তিনি বলেন,  আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে আমরা সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করি। ছোট ছোট প্যাকেজ তৈরি করা হয়, যাতে জনভোগান্তি কমে এবং কাজের সঠিক মনিটরিং সম্ভব হয়। আসলে এটি সারা বাংলাদেশেরই চিত্র।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.