নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় স্কয়ার, হেলথকেয়ার, রাসা সহ দেশের স্বনামধন্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির নাম ব্যবহার করে নকল ওষুধ তৈরির একটি কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকার নকল ওষুধ ও খাদ্যপণ্য জব্দ করা হলেও মাত্র ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সূত্রের দাবি, নকল ওষুধ উৎপাদনের তথ্য আগেই ঔষধ প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ গেজেট অনুযায়ী নকল ওষুধ প্রস্তুত ও বিপণন অপরাধে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও তা প্রয়োগ করা হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে -জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মিতা রায়ের প্রভাবে আইনি প্রক্রিয়া এড়িয়ে শুধু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ‘জরিমানামূলক’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার, আলামত জব্দ, ফরেনসিক পরীক্ষা এবং আদালতের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাশ কাটিয়ে পুরো অভিযান পরিচালিত হয় ভোক্তা অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে-যা আইনগত সমন্বয়ের প্রশ্ন তুলছে।
স্থানীয়রা বলেন, বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ এবং নকল শিশু খাদ্য জনবহুল এলাকায় পোড়ানোয় মারাত্মক ধোঁয়া ও দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষণ ছড়ায়। তাদের অভিযোগ-“মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ অপরাধকে ক্ষুদ্র জরিমানায় ছেড়ে দিলে অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করবে।”
জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাজে ডুমুরিয়া সরকারপাড়া এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় ক্যালসিয়াম ও ওমিপ্রাজলসহ বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ জব্দ করা হয় এবং কারখানা মালিক গোলাম রব্বানীকে (পিতা: আব্দুল হান্নান) ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম জানান- “কারখানা মালিক নিজেই নকল ওষুধ তৈরি করে প্যাকেটজাত ও বাজারজাত করতেন। জব্দকৃত পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা।”
অভিযানকালে জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মিতা রায় উপস্থিত ছিলেন এবং ঘটনাটি নিশ্চিত করেন।
স্বনামধন্য কোম্পানির নকল ওষুধের প্রমাণ মিললেও আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন-এ প্রশ্নে মিতা রায় বলেন, “বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে জানানো হয়েছিল। প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে ভোক্তা অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেয়। জরিমানা ও পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন- “নকল ওষুধ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। তাই ঔষধ নীতিমালা অনুযায়ী যেসব দণ্ডবিধান রয়েছে, সেগুলো প্রয়োগ হওয়া উচিত ছিল। ভবিষ্যতে সমন্বিত কঠোর ব্যবস্থার প্রয়োজন।”
উপ-সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বলেন, “নকল ওষুধ ও নকল শিশু খাদ্যের সত্যতা পাওয়ার পর ভোক্তা অধিদপ্তরের আইনে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি শুধু ভোক্তা অধিদপ্তরের আইন দিয়ে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। নকল ওষুধ উৎপাদন সরাসরি মানুষের জীবনের জন্য হুমকি। আইন অনুযায়ী কঠোর দণ্ড প্রয়োগ না হওয়া একটি বড় ঘাটতি।”
বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির কেন্দ্রীয় পরিচালক ও নীলফামারী জেলা সভাপতি হাকীম মোস্তাফিজুর রহমান সবুজ বলেন,“নীলফামারীতে নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে ঔষধ প্রশাসনের ভূমিকাই সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ। তথ্য দিলেই তা নকলবাজ চক্রের কাছে ফাঁস হয়ে যায়-এ যেন ভয়াবহ সিন্ডিকেট।যাদের দায়িত্ব নকল ওষুধ দমন করা, তারাই আশ্রয় দিচ্ছে।”
তিনি দাবি করেন- “নকল ওষুধ প্রস্তুত ও বিক্রয়ের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজা তো রয়েছেই। শুধুমাত্র জরিমানা করলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হবে।”
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন, দায়িত্বে অবহেলা বা দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা, নকল ওষুধ উৎপাদন মামলায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করা।
তাদের মতে, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নকল ওষুধ উৎপাদনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
