মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০২৫ উপলক্ষে পাঁচ অদম্য নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে ‘নারী ও কন্যাশিশু সহিংসতা বন্ধে একজোট হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জেসমিন আক্তারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌমিতা গুহ ইভা, সাটুরিয়া উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি গণেশ চন্দ্র ঘোষ ও সাটুরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম।
সম্মাননা পাওয়া নারীরা হলেন,মোসাম্মৎ লিপি আক্তার (সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান)বাল্যবিবাহের শিকার হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। ব্যক্তিগত সংগ্রাম পেরিয়ে এলাকার মানুষের ভালোবাসায় পরপর দুইবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এবং গ্রামীণ রাস্তা, কালভার্ট নির্মাণ থেকে শুরু করে দুঃস্থ মানুষের সরকারি সুবিধা নিশ্চিত করেছেন।
আলেয়া আক্তার (সফল জননী নারী) সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েও বাবার বাড়িতে থেকে চাকরি করেন এবং একাই তিন সন্তানকে লালন-পালন করেন। তাঁর তিন সন্তানের সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত।
শাহীনা আক্তার (শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সাফল্য) চরতিল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনা আক্তার পারিবারিক চাপ ও নির্যাতনের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে কর্মজীবনে সাফল্য অর্জন করেন। তিনি দু’বার জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা নির্বাচিত হন এবং সরকারিভাবে ইন্দোনেশিয়া সফরের সুযোগ পান।
বিলকিস আক্তার (নির্যাতনের দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে নতুন জীবনের যাত্রী)স্বামীর মাদকাসক্তি, মাত্র আঠারো বছর বয়সে তালাক এবং সন্তান নিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও দমে যাননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানকে বড় করেন। পরে পিতলের কাজ শেখেন, আর এখন তাঁর ছেলে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য।
লাল কিমপার (অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী)অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সোপিস, ক্যান্ডেল ও সেলাই কাজ শুরু করেন। বর্তমানে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক কোর্সও শেষ করছেন। মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং অন্যের কর্মসংস্থানে সহায়তা করছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের সমন্বিত ভূমিকা জরুরি। নারীর সামাজিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে নির্যাতন কমবে, এগিয়ে যাবে দেশ।