ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
প্রায় ৩০ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে একদিনও নেননি নৈমত্যিক ছুটি। বিদ্যালয়কে আগলে রেখেছেন বটবৃক্ষের মতো। আর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আগলে রেখেছেন সন্তানের মতো। তাইতো তার বিদায় বেলায় এলাকাবাসী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী আয়োজন করলেন ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের। প্রধান শিক্ষককে জানালেন ছাদখোলা গাড়িতে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা। ৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের চরসাপমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমানের অবসর উপলক্ষে এমন বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মোহসীনা সোবহান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী। স্থানীয় মো. আল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মানপত্র পাঠ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহদী মাসুদ। ওইসময় লছমনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম রব্বানী, ছনকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য ইসমাইল হোসেন,, স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক মিয়া, নারী ইউপি সদস্য রূপালী বেগম, স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোরাদ, মো. সজল, সোহাগ মিয়াসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার ফটিয়ামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তিনি বদলি হয়ে চরসাপমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন। এরপর থেকে তিনি দীর্ঘ ২৬ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোছা. বর্ষা বলেন, সিদ্দিক স্যার আমাদের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। তার আদর-শাসনেই আমরা মানুষ হয়েছি। তার বিদায়ে আমাদের অন্তর ভারাক্রান্ত। আমরা স্যারের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। প্রাক্তন শিক্ষার্থী মামুন মিয়া বলেন, সিদ্দিক স্যার এই অঞ্চলের আলোকবর্তিকা হয়ে এসেছিলেন। তার ছোঁয়ায় এই অঞ্চলের বহু শিক্ষার্থী প্রাথমিকের গ-ি পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষা শেষ করেছে। এখন চাকরি-বাকরি করছে। তার বিদায়বেলায় আমরা ব্যথিত। আরেক শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সিদ্দিক স্যার এই অঞ্চলে হেড স্যার নামেই পরিচিত। স্কুলে পড়াকালে তাকে কখনো অনুপস্থিত দেখিনি।
বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান আবেগাপ্লুত হয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৯৯ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদানের সময় শিক্ষক ছিলো মাত্র তিনজন। পাকা ভবনও ছিল না। তখন থেকে শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো আগলে রেখে পড়িয়েছি। পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয় ভবন পাকা হয়েছে। আমার শিক্ষার্থীরাও উন্নত পরিবেশে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তাদের অনেকেই এখন সরকারি চাকরিসহ ভালো অবস্থায় রয়েছেন। সরকারি ছুটি ব্যতীত আমি কখনোই নৈমত্যিক ছুটি কাটাইনি। বিদ্যালয়টিই আমার পরিবার। আজকে বিদায় বেলায় তাদের দেখে আমি খুবই আনন্দিত, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার সকল সন্তানেরা ভালো থাকুক। আমার প্রাণপ্রিয় বিদ্যালয়টিও ভালো থাকুক, আরও এগিয়ে যাক। আজকে এলাকাবাসী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সম্মান দিলো আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই- বলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, অনেকেরই ধারণা যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা হয় না। সেই ধারণাটিকে বদলে দিয়েছিলেন সিদ্দিক স্যার। আমরা তার সাফল্যের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মোহসীনা সোবহান বলেন, বিদায় বা অবসর রুটিনমাফিক প্রক্রিয়া। প্রতিমাসেই কোন না কোন শিক্ষক অবসর নিলেও সবাই এমন বিদায় পায় না। সত্যিই তিনি কর্মকালীন জীবনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন। এটি তার জন্য একটি অনন্য অর্জনের পাশাপাশি আমাদের জন্যও গৌরবের।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
