চিকিৎসা যখন পেশার গণ্ডি পেরিয়ে মানবিক দায়বদ্ধতায় রূপ নেয়, তখনই জন্ম নেয় ডা. অমিতাভ তরফদারের মতো মানুষ। আন্তরিক ব্যবহার, সততা ও গভীর সহমর্মিতায় তিনি প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। রোগীর সঙ্গে তার বন্ধুসুলভ আলাপন অনেক সময় ওষুধের আগেই কাজ করে—ভরসা জাগায়, সুস্থতার মনোবল বাড়ায়।
একজন আদর্শ চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব রোগীকে সম্মান করা—এই নীতিতেই বিশ্বাসী ডা. অমিতাভ। কোনো তুচ্ছতা নয়, বরং ধৈর্য ও মানবিক মমতায় তিনি রোগীর কষ্ট অনুভব করেন। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই তার কাছে পান সমান মনোযোগ ও যত্ন। মানুষকে আপন করে নেওয়ার যে সহজাত ক্ষমতা তার আছে, সেটাই তাকে আলাদা করে তুলে ধরেছে।
শহরের আরামদায়ক জীবন ছেড়ে মানবসেবার টানে তিনি গ্রামাঞ্চলে আসেন। লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে তিনি দুমকি উপজেলার বিশেষায়িত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লুথ্যরান হেলথ কেয়ার-এ আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অল্প সময়েই তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন এবং “মানবিক ডাক্তার” হিসেবে জেলা জুড়ে পরিচিতি লাভ করেন।
ডা. অমিতাভ তরফদার ২০১৩ সালের জুলাই মাসে এমবিবিএস পাস করেন এবং ২০১৪ সালে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ইমার্জেন্সি, মেডিসিন, সার্জারি ও শিশু বিভাগে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি লুথ্যরান হেলথ কেয়ারে যোগ দেন এবং তখন থেকেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হন।
রোগীদের সঙ্গে সদাচরণ, সেবার মানোন্নয়ন এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে তিনি লুথ্যরান হেলথ কেয়ারের হারানো বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া ও নিজ খরচে ওষুধ সরবরাহ—এমন মানবিক উদ্যোগে বহু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
লুথ্যরান হেলথ কেয়ারে চিকিৎসা নেওয়া রোগী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ডিগ্রি নয়, গুণই একজন মানুষকে ভালো চিকিৎসক বানায়—ডা. অমিতাভ তার প্রমাণ।” শিশুর মা সোনিয়া আক্তার বলেন, “তার সঙ্গে কথা বললেই মনের ভয় কেটে যায়, রোগও যেন অর্ধেক কমে যায়।”
১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর খুলনায় জন্ম নেওয়া ডা. অমিতাভ তরফদার একজন অবসরপ্রাপ্ত নার্সিং সুপারভাইজারের সন্তান। ব্যক্তিজীবনে তিনি সদালাপী ও হাস্যোজ্জ্বল মানুষ। মানবসেবাকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে আজ তিনি দুমকি ও আশপাশের অঞ্চলে একজন সত্যিকারের মানবিক চিকিৎসক হিসেবে ব্যাপক সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেছেন।