ছবি: সংবাদ সারাবেলা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ মানুষকে নাগরিক সেবা প্রদানে নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ উঠেছে পরিষদে কর্মরত এক উদ্যোক্তা ও সচিবের বিরুদ্ধে। জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, পারিবারিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়নপত্র, মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনসহ প্রায় সব ধরনের সেবায় ক্ষেত্রবিশেষে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি ফি কম বা অনেকে ক্ষেত্রে না থাকলেও পরিষদের কর্মকর্তাদের ‘চাহিদামতো’ টাকা না দিলে সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। সাধারণ সেবার জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা, এবং ‘দ্রুত সেবা’ চাইলে তা বেড়ে হাজার টাকায় পৌঁছায়।
সরকার পরিবর্তনের পর ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতে জনস্বার্থে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এই পরিস্থিতিতে সেবার গতি কমেছে বলে অভিযোগ থাকলেও, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তাদের দাবি, উদ্যোক্তা লিটন কুমার নাথ আওয়ামী শাসন আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তিনি ‘ফ্যাসিস্ট ঘরানার অনুসারী’। বর্তমানে তার সঙ্গে এখনও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন:“চেয়ারম্যান পলাতক, কিন্তু তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কেন এখনো পরিষদে দায়িত্ব পালন করছেন?”
অভিযোগ রয়েছে, উদ্যোক্তা লিটন সহকারী জয়সহ একাধিক বাহিরের কম্পিউটার দোকানদার রাত অবধি পরিষদে কাজ করে থাকেন।
ইউনিয়ন বিএনপির একজন সিনিয়র সদস্য বলেন: “আমি একটি কাজে পরিষদে গিয়ে উদ্যোক্তা লিটনকে অনুরোধ করলে তিনি বলেন—‘পরিষদ কি আপনার কেনা?’ তার এমন ব্যবহারে আমি হতবাক হয়ে যাই। আমরা ফ্যাসিস্টদের দোসর পরিষদে চাই না। তাকে অবিলম্বে পরিষদ থেকে বিতাড়িত করা হোক।”
অন্য একজন ভুক্তভোগী জানান: “জন্ম নিবন্ধন ২৫০–৩০০ টাকা ছাড়া হয় না। ওয়ারিশ সনদের জন্য ৫০০–১০০০ টাকা লাগে। প্রত্যয়ন পত্র নিতে ২০০–৩০০ টাকা লাগে। টাকা কম দিলে ৩ দিনের কাজ ১৫–২০ দিন ঘুরতে হয়।”
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন যে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও হয়রানি বেড়েছে।
উদ্যোক্তা লিটন কুমার নাথ বলেন: “জন্ম নিবন্ধন করতে ২৫০ টাকা নিই। ৫০ টাকা সরকারি ফি, সচিবের অংশ, বাকি খরচ অনলাইন আবেদন ও আনুষঙ্গিক কাজে যায়। প্রতিটি কাজে সচিবকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে হয়। কাগজপত্র উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করাতে হয়, এতে সময় ও অর্থ ব্যয় দুটোই বাড়ে।”
পরিষদের সচিব দিদারুল হক বলেন: “আমি কারও কাছ থেকে কোন ধরনের ফি নিই না। অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয়।”
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ: “আগের সচিব থাকাকালীন স্বাক্ষর আনতে তেমন সমস্যা ছিল না, কিন্তু এখন নানা অজুহাতে দেরি করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে টাকা না দিলে কাজ হয় না। সবাই মিলেই দুর্নীতি করছে।”
তাদের মতে, ইউনিয়ন পরিষদ নাগরিক সেবা পাওয়ার প্রথমিক প্রতিষ্ঠান হলেও, বর্তমানে সেখানে হয়রানি, বিলম্ব ও নানা কৌশলে অতিরিক্ত অর্থ আদায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাজী এনামুল বারী বলেন: “অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি লোকমূখে শুনেছি, অভিযোগ কেউ করেনি। তারপরও আমি বিষয়টি নিয়ে পরিষদের সচিব ও উদ্যোক্তার সাথে কথা বলব।”
ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুদ্দিন বলেন: “অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি এবং নিজ উদ্যোগে তদন্ত করে সত্যতাও পেয়েছি। খুব শিগগিরই পরিষদের সচিব ও উদ্যোক্তার সাথে কথা বলব।”
এ বিষয়ে সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ফখরুল ইসলাম বলেন: “আমি বিষয়টি জানি না, আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। পরিষদে প্রতিটি কাজের নিদ্দিষ্ট ফি উল্লেখ করে লিফলেট টানানো আছে। অতিরিক্ত ফি নেয়ার সুযোগ নেই। উদ্যোক্তার আচরণ সম্পর্কে তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয়রা মনে করছেন, সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদে উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম, অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করে সেবায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের জরুরি ও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh
