× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মরছে মাছ, কাজ হচ্ছে না ঔষধে

মমিনুল ইসলাম, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :

১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৫ পিএম

ছবি: সংবাদ সারাবেলা।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে পাঙ্গাশ মাছের ভয়াবহ মড়কে দিশেহারা শতাধিক মৎস্য চাষি। প্রতিদিন ভেসে উঠছে শতশত বিক্রিযোগ্য পাঙ্গাশ মাছ। মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন খামারে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের অভিযোগÑনানা কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করেও মাছ মরার হার কমছে না; বরং দিন দিন আরও বাড়ছে।

ত্রিশাল মাছ উৎপাদনে সারাদেশে সুপরিচিত। দেশের প্রায় ২২ শতাংশ মাছ ময়মনসিংহ জেলায় উৎপাদিত হয় এবং তার একটি বড় অংশই ত্রিশাল থেকে আসে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ফিসারির পাড়জুড়ে স্তুপ আকারে এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার মরা পাঙ্গাশ মাছ। অরক্ষিত এসব মাছ থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

ফিসারির পাড়ে থাকা মরা মাছের এসব স্তুপ যেন একেকটি চাষির স্বপ্নভঙ্গের চিত্র। শুরুতে কিছু মাছ মাটিচাপা দেওয়া হলেও এখন আর সামাল দিতে পারছেন না তাঁরা। ফলে যত্রতত্র মৃত মাছ পড়ে থাকার কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া, মশা-মাছি ও পশুপাখির উপদ্রব। এতে পুরো এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র স্বাস্থ্যঝুঁকি।

চাষিরা জানাচ্ছেন, ধার–দেনা করে মাছের খাদ্য কিনে লালন করেন তাঁরা। হঠাৎ করে মাছ মরতে শুরু করায় দুই দিকেই ক্ষতিÑএকদিকে মাছ বিক্রি না হওয়ায় ঋণের চাপ, অন্যদিকে খামারে বাড়ছে লোকসান। অভিযোগ রয়েছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও মৎস্য বিভাগ থেকে তেমন কোনো সহায়তা বা তদারকি নেই।

ত্রিশাল উপজেলার চিকনা মনোহর, মঠবাড়ী, অলহরী ও দুর্গাপুর এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে একই চিত্রÑপ্রতিটি ফিসারিতেই উদ্বেগজনক হারে মাছ মরছে। মৃত মাছ ফেলে রাখা থাকায় মানুষের জীবনযাত্রাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় চাষিদের মধ্যে চিকনা মনোহর গ্রামের নজরুল ইসলাম মণ্ডল, ইমরান হোসেন, আবু সাঈদ খবীর, শাহাদাত হোসেন, মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী দুর্গাপুরের দেলোয়ার হোসেন, মঠবাড়ীর আবু নোমান রুবেল ও হেলাল উদ্দিনসহ শতাধিক চাষির খামারে লাখ লাখ টাকার মাছ মারা গেছে। কেউ কেউ বলছেনÑপ্রতিদিন কয়েকশ মাছ উঠছে; আবার কেউ বলছেনÑদশ দিনে প্রায় ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে।

অলহরী দুর্গাপুরের চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন,“কী কারণে মাছ মরছে বুঝতে পারছি না। দেড় লাখ টাকার মতো ওষুধ ব্যবহার করেছিÑকিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সকালে পুকুরে নামলেই শত শত মাছ ভেসে ওঠে। এই ক্ষতি কীভাবে সামাল দেব বুঝতে পারছি না।”

মঠবাড়ীর চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, “আমার ফিশারিতে প্রতিদিন ২০০–৩০০টি মাছ মরছে। মৎস্য অফিসের কেউ কখনো খোঁজখবর নেয় না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সবাই পথে বসবো।"

স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন,“মরা মাছ সঠিকভাবে মাটিচাপা না দিলে রোগজীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। এতে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে ত্রিশাল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুজ্জামান মাসুম বলেন,“আমাদের জনবল কম থাকার কারণে অনেক সময় সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তবে মাছ মৃত্যুর বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। পানির গুণগত মানের সমস্যা, দূষণ বা ঋতু পরিবর্তনের কারণেও এমনটি হতে পারে। দ্রুত মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু হবে। চাষিদের আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি। দেখা যায়, অনেক সময় চাষিরা আমাদের কাছে না এসে নন–ফিসারিজ গ্র‍্যাজুয়েটদের পরামর্শ নেন। এতে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় মাছ মারা যায়।”

চাষিদের দাবিÑদ্রুত সরকারি তদারকি, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। নইলে ত্রিশালের বৃহৎ মৎস্য খাত বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।


Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.