পরীক্ষার ফি না দেওয়ায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে পরীক্ষায় বসতে দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ক্ষেতলাল পৌরসভার মালিপাড়া গ্রামে ভুক্তভোগী ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। এছাড়াও বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত শিক্ষার্থী নজিবুর রহমান ওরফে বিশাল হত্যার মামলার অন্যতম আসামীও ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান। মামলার পর দীর্ঘদিন তিনি প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থী হাসিবুল বাসার আব্দুল্লাহ (১৩)। উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের দিনমজুর হাসান আলীর ছেলে। সে ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র, যার রোল নম্বর- ৭১।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষার ফি পরিশোধ করতে না পারায় বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিক্ষার্থী হাসিবুল। তার ভাষ্য, পরীক্ষার ফি না দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাকে পরীক্ষায় বসতে দেননি।
শিক্ষার্থীর মা লাভলি আক্তার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। নিয়মিতই স্কুলের বেতন দিই। অভাবের কারণে কিছুদিন বগুড়ায় থাকায় সন্তানকে নানীর কাছে রেখে যেতে হয়েছিল। নভেম্বর মাসে পরীক্ষার সময় বাড়িতে এসে সন্তানকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকের সঙ্গে দেখা করলে, তিনি ১ হাজার ৬২০ টাকা পরীক্ষার ফি দাবি করেন। এত টাকা জোগাড় করতে না পারায় আমার সন্তান পরীক্ষা দিতে পারেনি।
হাসিবুলের সঙ্গে কথা বললে সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়তে চাই। এই সপ্তম শ্রেণিতেই রেখে দিলে আমি আর পড়াশোনা করব না।
হাসিবুলের দাদি সুফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমি নাতিকে নিয়ে বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কমিটির কাছে এক হাজার টাকা দিয়ে হলেও পরীক্ষায় বসানোর অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তাতেও পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান বলেন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানে ফি মওকুফের তহবিল রয়েছে। পরিবার আবেদন করলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। এখন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষার সুযোগ ও পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার বাবলু কুমার মন্ডল, পরীক্ষার ফি না দেওয়ায় কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেনি এমন তথ্য এইমাত্র আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশ্যই শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সু-ব্যবস্থা করা হবে।